বাংলাদেশ–ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা : রূপরেখা চূড়ান্ত

মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পর ১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিষয়টি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে এবার ২৫ মার্চ কালরাত পালিত হবে গণহত্যা দিবস হিসেবে। মধ্যরাত থেকে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি। জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। প্রজ্ঞাপনে ২৫ মার্চকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবসগুলো জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটি পালনের জন্য ইতিমধ্যে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান। দিবস ঘোষণার জন্য মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়, বাঙালির মুক্তির আন্দোলনকে শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে ২৫ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। পৃথিবীর জঘন্যতম এ হত্যার যাতে কোনো সাক্ষী না থাকে, সে কারণে বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেলে বন্দী করে রাখা হয়। ২৬ মার্চ তাঁদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বাংলাদেশ নামের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। জাসদের সাংসদ শিরীন আখতার ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে প্রস্তাব তোলেন। সাত ঘণ্টা আলোচনার পর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানিয়ে আসছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সাল থেকেই কালরাত পালনের কর্মসূচি শুরু করে নির্মূল কমিটি। কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৯ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা সরকারিভাবে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং এ দিনটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের জন্য প্রচারাভিযান চালাচ্ছি। গত এক দশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও আমরা বলেছি, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণহত্যার ভিকটিমদের স্মরণ, গণহত্যার অবসান এবং গণহত্যাকারীদের বিচার দাবির জন্য জাতিসংঘের একটি ঘোষিত দিন থাকা প্রয়োজন,
যেখানে ২৫ মার্চের পক্ষে আমাদের যুক্তি তুলে ধরেছি।’ শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিকভাবে “গণহত্যা দিবস” হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এর ফলে আমাদের ১২ বছরের দাবির একটি অংশের আর কার্যকারিতা থাকছে না। এর পরিবর্তে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গণহত্যার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য প্রচার অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। কারণ, পশ্চিমের শক্তিধর দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশ এখনো বাংলাদেশের গণহত্যাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।’ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্‌রিয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণহত্যা দিবসের ব্যাপারে তথ্য ইতিমধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর এবং জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশের মিশনগুলো যাতে দিবসটি বিশেষভাবে পালন করতে পারে, সে জন্য মিশনগুলোতে তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে যেসব দেশ আমাদের সমর্থন দিয়েছিল, সে দেশগুলোর পার্লামেন্ট বা আইনসভায় ২৫ মার্চের স্বীকৃতি আদায় করা হলো মূল লক্ষ্য।
কর্মসূচি: এবার প্রথম গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহমুদ রেজা খান প্রথম আলোকে বলেন, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ, গণহত্যার ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এ প্রদর্শনী দুই দিন থাকবে। এ ছাড়া থাকবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন শহীদ মিনারের বেদিমূলে পুষ্পস্তবক দেওয়া হবে। তবে এবার শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হবে ২৬ মার্চ ভোরে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

No comments

Powered by Blogger.