রাত পোহাবার কত দেরি? by ড. এম এ সবুর

বাংলাদেশ মহাসঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক চরম অস্থিরতায় দেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে। গুম-খুন-ধর্ষণ-অপহরণ ইত্যাদি অপরাধ ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে সাধারণ মানুষের জানমাল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এতে সারা দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-আশঙ্কা বিরাজ করছে। এক দিকে অপরাধীরা প্রভাবশালীদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় নির্বিঘেœ অপরাধ করার সুযোগ পাচ্ছে, অন্য দিকে অন্যায়-অসত্যের প্রতিবাদকারীদের ‘দুষ্কৃতকারী’ আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আর ক্ষমতার দাপটে ইচ্ছানুযায়ী বিরোধী দল-মতের নেতাকর্মীদের রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার অজুহাতে অন্যায়ভাবে বন্দী করে রাখা হচ্ছে। অধিকন্তু গত বছর সংসদ নির্বাচনের নামে প্রহসন চালিয়ে সরকার জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এতে গণতন্ত্রের ভিত্তিটাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ও গণমানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে সরকার স্বেচ্ছাতন্ত্র কায়েম করেছে। ‘অবাধ্য’ সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধ করে স্তুতিকারদের মাধ্যমে ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আশ্রিত সন্ত্রাসীদের অপকর্ম প্রতিপক্ষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টাও কম হয়নি। আইনের শাসনকে নির্বাসিত করা হয়েছে। বিরোধী নেতাদেরকে বিচারের নামে সরকার ইচ্ছামতো নিপীড়ন ও বন্দী করছে। দেশের এ অনৈতিক অবস্থা মাৎস্যন্যায় যুগের সাথে তুলনীয়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সোনালী ব্যাংক-হলমার্কের সাগর চুরি, ক্ষমতার পাঁচ বছরে মন্ত্রী-এমপিদের হাজার গুণ সম্পদ বৃদ্ধি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে নির্বিচারে হামলার মহাতাণ্ডব ইত্যাদি অপকর্মে জনগণ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘টর্চার সেল’ বসিয়ে ছাত্রদের থেকে চাঁদা আদায় করার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশের সাথে যোগসাজশে মামলা-হামলা ছাড়াও সারা দেশে সরকার সমর্থক লোকজন বিপুল চাঁদাবাজি করছে। এ ছাড়া টেন্ডারবাজি-নিয়োগবাণিজ্য পুরোদমে চলছে। মদদপুষ্ট গোষ্ঠী অল্প সময়ে ও বিনাশ্রমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছে; এ অবস্থায় দেশের মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছে। এ জন্য তারা বারবার সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা সরকারি দলের নির্দেশ-হুমকি উপেক্ষা করে ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় নির্বাচনে সরকারকে ‘না’ বলে দিয়েছে। গণতন্ত্রপন্থীদের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা কথিত প্রহসনমূলক সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছে। ওই নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। দেশ-বিদেশের গণতন্ত্রপন্থীরা অবিলম্বে জনগণের অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করে আসছে। আর দেশবাসী কথিত নিয়ম রক্ষার অনৈতিক সরকারের মাৎস্যন্যায় যুগের অবসান চাইছে। এ জন্য সরকারের নির্মম দমন-পীড়ন সত্ত্বেও শহর-গ্রামগঞ্জের মানুষ সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। দুর্বলতা ও অদূরদর্শিতার কারণে জাতি আজ অবৈধ সরকারের শোষণ-জুলুমের অন্ধকারে নিমজ্জিত। মানুষ মহাত্রাণকর্তা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করছে। আর এ থেকে মুক্তির প্রহর গুনছে। কণ্ঠে তাদের আর্তনাদ-আহাজারি আর মনে প্রশ্নÑ ‘রাত পোহাবার কত দেরি?’
dmasobur09@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.