সুইয়ে গাঁথা জীবন

কুমিল্লা শহরের মুরাদপুর এলাকায় নিজের ঘরে সুই–সুতার কাজে
ব্যস্ত শাহানারা বেগম l ছবি: প্রথম আলো
ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তা কুমিল্লার প্রয়াত জাহান আরা বেগমের কাছে সাত বছর বয়সে সুই-সুতার কাজ শুরু করেন শাহানারা বেগম। এখন তাঁর বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই তিনি লেগে যান কাজে। শাহানারা বেগম নিজের হাতে তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে সংসারের সিংহভাগ খরচের জোগান দিচ্ছেন। দুই ছেলেমেয়েকে পড়াশোনাও করাচ্ছেন।
শাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার বয়স যখন সাত, তখন আমার মা রাবেয়া খাতুন আমাকে জাহান আরা বেগমের কাছে নিয়ে যান। পরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে চলে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও বুননের কাজ। মহীয়সী ওই নারীর কাছে চটের ওপর নকশাসহ নানা ধরনের হাতের কাজ শিখেছি। ওই কাজ শিখেই উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছি। ১৯৯৪ সালে বিয়ে হওয়ার পর থেকে সেলাই, এমব্রয়ডারি ও উলের কাজ করছি। সেখান থেকে যে টাকা আয় হতো, তা দিয়ে সংসার চলত।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। এর পর থেকে তিনি বাস চালানো ছেড়ে দেন। পরে আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফরমায়েশ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। তখন আমার মেয়ে সহযোগিতা করে। কুটিরশিল্প আমার জীবন বদলে দিয়েছে।’
শাহানারা বেগমের মেয়ে খাতুনে জান্নাত কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। একমাত্র ছেলে খায়রুল এনাম এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। স্বামী আবুল খায়ের জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালে কাজ করছেন।
কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত জাহান আরা কুটিরশিল্পের পরিচালক খায়রুল বাশার শিপন বলেন, ‘আম্মা (জাহান আরা বেগম) ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে গত হয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সমাজের বঞ্চিত, উপেক্ষিত নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিতেন। তাঁর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েই শাহানারাসহ আরও বহু নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন।’
জাহান আরা বেগম বাংলাদেশে কুটিরশিল্পের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা পদকসহ দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কার অর্জন করেন।

No comments

Powered by Blogger.