যেভাবে তুলে নেয়া হয় সালাহউদ্দিনকে -স্বাধীন তদন্ত দাবি এইচআরডব্লিউ’র

বিএনপি’র মুখপাত্র ও যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে বলপূর্বক গুমের ঘটনায় অবিলম্বে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। একই সঙ্গে অতীতের বলপূর্বক গুমের সব ঘটনায় তদন্তের তাগিদ দিয়ে সংস্থাটির এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, প্রধান বিরোধী দলের  সদস্যদের জোরপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তে ব্যর্থ হওয়ার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। সালাহউদ্দিন আহমেদের জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে সেটা করতে হবে। কারণ, ৮ই এপ্রিল পর্যন্ত তা অনেক দেরি হয়ে যাবে।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, ২০১৫ সালের ১০ই মার্চ শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল সালাহউদ্দিনকে। নিজেদের ডিটেক্টিভ ব্র্যাঞ্চের (ডিবি) পুলিশ পরিচয় দিয়ে কয়েক ব্যক্তি তাকে ধরে নিয়ে যায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নেয়ার ঘটনার বিবরণও দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, যে বাড়ি থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নেয়া হয়, ওই বাড়ির কেয়ারটেকারের বক্তব্যমতে ১০ই মার্চ রাত ১০টার দিকে সাদা পোশাকের একাধিক সদস্য ওই বাড়ির সামনে আসেন। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন এবং তাদের ব্যাজ দেখান। তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশের আধ ঘন্টা পর নেমে আসেন। তাদের সঙ্গে হাতকড়া পরা অবস্থায় সালাহউদ্দিন আহমেদও ছিল। তারা তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে, এলিট ফোর্স র‌্যাবের একটি গাড়িও সেখানে ছিল। এরপর থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ রয়েছেন।  
সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজের ঘটনায় সরকার তাদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে বা এ মুহূর্তে সালাহউদ্দিন কোথায় অবস্থান করছেন, সে ব্যাপারেও কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে সালাহউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ জানান। সালাহউদ্দিন আহমেদকে আদালতে হাজির করার দাবি জানিয়ে তার স্ত্রী এ ব্যাপারে একটি মামলাও করেন। তা সত্ত্বেও, তাকে প্রকাশ্যে আনা হয়নি। ঢাকায় হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে গত ১৬ই মার্চ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) জানান, তার আওতাধীন নিরাপত্তা বাহিনীসমূহ সালাহউদ্দিনকে আটক করেনি। পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত পরিচালনা করার পক্ষে আদালতে তেমন কোন তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আদালতের শুনানি আগামী ৮ই এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
২০১৪ সালের জানুয়ারির ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দল ও বিরাধী দলের মধ্যে যে সহিংসতার সূত্রপাত হয়, চলমান সহিংসতা সেটারই ধারাবাহিকতা। নির্বাচনের আগে ও পরে বেশ কয়েক শ’ মানুষ নিহত বা নিখোঁজ হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সাল থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অন্যান্য সংগঠনগুলো বাংলাদেশে বলপূর্বক গুমের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করেছে। অধিকাংশ গুমের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ২০১২ সালে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন। তার ভাগ্যে কি ঘটেছে, তা নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে ৭ জনকে অপহরণ ও সুস্পষ্টভাবে চুক্তিভিত্তিক হত্যাকা-ের ঘটনায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সন্দেহভাজন সদস্যদের ভূমিকা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে সেটাও গণমাধ্যমের পুক্সক্ষানুপুক্সক্ষ বিশ্লেষণের কারণে।
অ্যাডামস তার বিবৃতিতে বলেন, কর্তৃপক্ষ বলপূর্বক গুমের বহু ঘটনা গুরুত্ব সহকারে নথিভুক্ত করেছে। তা সত্ত্বেও, এ ঘটনাগুলো সরকার তদন্ত করেছে, সে ব্যাপারে যৎসামান্য ও এমনকি বহু ক্ষেত্রে কোন তথ্য-প্রমাণও নেই। তিনি বলেন, জনগণের কাছে সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, নিরাপত্তা বাহিনীর কোন সদস্যকে তাদের ভূমিকার জন্য জবাবদিহি করতে হয়নি। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু, বাংলাদেশে দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি তার শাসনামলের আগে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল, তিনি ক্ষমতায় আসার পরও তাতে কোন পরিবর্তন আসেনি। অ্যাডামস বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের গুমের ঘটনা বড় একটি রীতির একটি অংশ। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অস্বীকৃতি এবং তদন্তের জন্য অর্থবহ কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা একই ধরনের আচরণের অংশ।

No comments

Powered by Blogger.