আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা -জবাবদিহির আওতায় আনুন

বাংলাদেশের পুলিশ তথা সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের ব্যবহার বা বাহিনীর সক্ষমতার বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে গুরুতর প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক গত সোমবার লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যা নিয়ে এক আলোচনায় বলেছেন, এই ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) পদত্যাগ করা উচিত ছিল।
এটা সবার জানা যে অভিজিৎ হত্যার দিন ঘটনাস্থলের কাছে থেকেও পুলিশ হত্যাকারীদের নিবৃত্ত করা তো দূরে থাক, ঘটনার পরে তাদের ধরারও চেষ্টা করেনি, আহতকে হাসপাতালেও নিয়ে যায়নি। অন্যদিকে তিন সপ্তাহ পার হলেও অভিজিৎ হত্যা মামলার অগ্রগতি হয়নি, একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি ছাড়া কেউ ধরা পড়েনি।
অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ আট দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের রুলের জবাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে বক্তব্য দিয়েছে, তাও কতটা বিশ্বাসযোগ্য ভেবে দেখার বিষয়। বিএনপি-সমর্থক আইনজীবী সোহেল রানার ৩৬ দিন ধরে নিখোঁজ থাকারই বা জবাব কী? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী বা সংস্থার সদস্যরা এদের ধরেননি, এই ব্যাখ্যাই যথেষ্ট নয়। কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে, কোথায় নিয়ে গেছে, সেটি খুঁজে বের করা তাঁদেরই দায়িত্ব। এর পাশাপাশি সিলেটে শিশু অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে একজন পুলিশ কনস্টেবলের জড়িত থাকার ঘটনায় এই বাহিনীর নৈতিক অবক্ষয়ই সামনে আসে।
এসবের প্রতিকার কী? বিচারপতি খায়রুল হক আইজিপির পদত্যাগের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন যে আমাদের দেশে সেই রেওয়াজ নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাই বলে কি জনগণের অর্থে পরিচালিত এবং তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনী জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এই বাহিনীগুলোর যেসব সদস্য অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.