জয়দেবপুর থেকে অপহরণের পর শিশু ইমনকে হত্যা

রাজধানীর বনানী থানার কাকলীতে যাত্রীবাহী বাসে রাখা ট্রাভেল ব্যাগের মধ্য থেকে উদ্ধার হওয়া লাশটি শিশু শহীদুল ইসলাম ইমনের। ইমনের বাসা গাজীপুরের জয়দেবপুরে। সে স্থানীয় একটি স্কুলের শিশু শ্রেণীর ছাত্র। তাকে রোববার বিকালে বাসার সামনে থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহরণকারীরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। মঙ্গলবার দুপুরে ইমনের বাবা ও চাচা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা আফতাব উদ্দিন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শাকিল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শিশুটির চাচা রফিকুল ইসলাম জানান, জয়দেবপুর মোগরখালের আনোয়ার মোল্লার বাড়িতে ভাড়ায় থাকেন ইমনের বাবা আফতাব উদ্দিন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে ইমন সবার ছোট। সে মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্র। শিশুটির বাবা আফতাব কাঁচামাল ব্যবসায়ী এবং মা রীনা গার্মেন্ট কর্মী। রোববার বিকালে বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয় ইমন। তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে জয়দেবপুর থানায় ওই রাতেই লিখিত অভিযোগ করেন আফতাব উদ্দিন। আফতাব যুগান্তরকে বলেন, ওই দিন রাত ৯টার দিকে বাড়ির মালিক আনোয়ার মোল্লার ছেলে শাকিল তাদের জানায়, তার মোবাইল ফোনে অজ্ঞাতস্থান থেকে এক নারী বলেছে ইমনকে ফেরত পেতে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। টাকা না দিলে ইমনকে মেরে ফেলা হবে। সোমবার সকালে টাকার জন্য আবার যোগাযোগ করবে বলে ওই ফোনে জানানো হয়েছিল। এরপর থেকেই ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। আফতাব অভিযোগ করেন। তার ছেলের অপহরণ ও হত্যার পেছনে শাকিলের হাত রয়েছে। অপহরণকারীরা তাকে ফোন না দিয়ে শাকিলকে ফোন দেয়া রহস্যজনক। শাকিলই ইমনকে খুন করেছে। ইমনের চাচা রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে বিভিন্ন টেলিভিশনে বনানী থেকে শিশুর লাশ উদ্ধারের খবর শুনি। মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন পত্রিকায় ছেলের বর্ণনা দেয়া রিপোর্ট পড়ি। এরপর দুপুরে বনানী থানায় যাই। জামা দেখে নিশ্চিত হই শিশুটি ইমন। বিকালে হাসপাতাল মর্গ থেকে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার উদ্দেশে রওনা হন তারা। এদিকে শাকিলকে মঙ্গলবার দুপুরে বোর্ডবাজার থেকে জয়দেবপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জয়দেবপুর থানার ওসি রেজাউল হাসান যুগান্তরকে বলেন, শাকিলকে বনানী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বনানী থানার ওসি ভুইয়া মাহবুব হাসান জানান, তার থানাধীন কাকলীতে যাত্রীবাহী বাস থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার হওয়ায় সোমবার রাতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শাকিল জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যায় বনানীর কাকলীতে দেশবাংলা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে রাখা ট্রাভেল ব্যাগের মধ্যে থেকে ইমনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ব্যাগে বোম রয়েছে এই আতংকে যাত্রীরা বাস থেকে নেমে যান। লাশের পরিচয় না পাওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। লাশ উদ্ধারের সময় চালক ও হেলপারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেয়া হয়। তবে বাসটি আটক আছে।

No comments

Powered by Blogger.