নহরকে নিয়ে মনীষার ইচ্ছা by সিরাজুস সালেকিন

রাজনীতি করা খারাপ নয়। যারা রাজনীতি করে তারা দেশের জন্য কাজ করে। তাই ছোট্ট শিশু নহরের মায়ের ইচ্ছে ছেলে বড় হয়ে রাজনীতি করবে। দেশের মঙ্গলে কাজ করবে। চার দিন বয়সের শিশু নাদিফুজ্জামান নহর। যার বাবা নুরুজ্জামান জনি দুই মাস আগে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ গেছেন। ছাত্রদলের খিলগাঁও থানার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। গত ১৩ই মার্চ রাত দেড়টায় পুত্র সন্তান প্রসব করেন জনির স্ত্রী মুনিয়া পারভীন মণীষা। সবুজবাগের হেলথ এইড ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার শিশুর জন্ম। গত সোমবার সন্তান নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। মৃত্যুর আগেই জনি জানতে পেরেছিলেন যে তার পুত্র সন্তান হবে। নাদিফুজ্জামান নহর নামটা আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও তাকে দেখতে হাসাপাতালে গিয়েছিলেন। মণীষা বর্তমানে খিলগাঁওয়ের শান্তিপুরে তার বাবার বাসায় অবস্থান করছেন। ২০১২ সালের ২৩শে নভেম্বর জনির সঙ্গে বিয়ে হয় মণীষার। পড়াশোনা করেছেন ডিগ্রি পর্যন্ত। তার ছোট ভাই এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আর ছোট বোনের বয়স তিন বছর। বাবা মঈদুল হক পেশায় ব্যবসায়ী। জনিও রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিয়ের পর জনির পরিবারের সঙ্গে থাকতেন মণীষা। তার মৃত্যুর পর বাবার বাসায় চলে আসেন। গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নহর হবে ‘সেকেন্ড জনি’। সে বাবার মতই রাজনীতি করবে। রাজনীতি করা কোন খারাপ কাজ না। তাই যদি হতো তাহলে আওয়ামী লীগ যারা করে তারা সবাই খারাপ কাজে জড়িত। জনি দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। নহর বড় হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে। স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে মণীষা বলেন, আমার সন্তান যখন বড় হয়ে জিজ্ঞেস করবে তার বাবাকে কারা খুন করেছে সে প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দেব জানি না। সরকার ক্রসফায়ারের কথা বলছে। কিন্তু সেটা তো কেউ বিশ্বাস করবে না। ঘটনার সময় যদি জনির হাত থেকে পিস্তল উদ্ধার হয়ে থাকে তবে পুলিশের গায়ে কেন কোন গুলি লাগলো না? কেন জনির গায়ে ১৬টি বুলেট বিদ্ধ হলো? আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইছি। তিনি যদি বিচার না করেন তবে আল্লাহ যেন দোষীদের বিচার করেন। আমার সন্তান যেন বড় হয়ে জানতে পারে তার বাবা নির্দোষ ছিল। মণীষা বলেন, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে দেশে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে। দেরিতে হলেও জনি হত্যার বিচার তিনি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মণীষা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, যখন নহর স্কুলে যাবে তখন বাবার গল্প কাউকে বলতে পারবে না। ভাবতেই কান্না চলে আসছে। প্যারেন্টস ডে’তে বাবাকে সে পাবে না। তার বেড়ে উঠাটা হবে অনেক কষ্টের। নহর গর্ভে থাকা অবস্থায় গত ১২ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন মণীষা। কিন্তু সেখান থেকে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ এক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দিলেও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশিতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়েছিলেন বলে জানান মণীষা।
গত ১৯শে জানুয়ারি সোমবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাইকে দেখতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন জনি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৬টি রাজনৈতিক মামলা ছিল। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, সোমবার রাত তিনটার দিকে জনিকে নিয়ে জোড়পুকুর বালুর মাঠে নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশ পাল্টা গুলি করলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে জনি আহত হয়। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের দাবি জনিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। তার গায়ে ১৬টি গুলির চিহ্ন ছিল।

No comments

Powered by Blogger.