অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে আন্তর্জাতিক বিচার সংস্থা by এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন

বাংলাদেশ সরকার বিরোধীদের ওপর  অভিযান চালাতে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত ‘যৌথবাহিনী’কে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিরোধী দলের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত এমন ব্যক্তিদের বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর করা হচ্ছে। নারী, শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এই দমন-পীড়নের ফলে। এ অবস্থায় তাদের সুবিচার পাওয়ার পথ সঙ্কীর্ণ হয়েছে। ফলে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে আন্তর্জাতিক বিচার বিষয়ক সংস্থা। গতকাল এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে হংকং ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। ‘বাংলাদেশ: গভর্নমেন্ট ড্রাইভ এগেইনস্ট অপজিশন অ্যান্ড সিটিজেনস’ শীর্ষক ওই বিবৃতিতে বলা হয়, আশ্রয় খুঁজতে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ। ব্যক্তিগত সহায়-সম্পত্তি ভাঙচুরে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের সহযোগিতা করছে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা যৌথ বাহিনীর অভিযান চালাকালে বাড়িঘর তছনছ  করছে ও আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার অজুহাতে এই দমন-পীড়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ও ক্ষমতাসীন  দলের রাজনীতিকরা। তারা বলছেন, রাহপথের সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ, মহাসড়কে তারা নিরাপত্তা দিচ্ছেন। বলা হয়েছে, জনজীবন স্বাভাবিক করতে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ৫ই জানুয়ারি থেকে বিরোধীদের অবরোধে দেশে কার্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সে অবস্থায় সরকার এ অবস্থান নিয়েছে। কোন ভোট ছাড়াই গত বছর জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থী নির্বাচিত হন ক্ষমতাসীন দলের। সেক্ষেত্রে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। বিরোধী দল ওই নির্বাচন বর্জন করে এবং তখন থেকেই তারা সবার অংশগ্রহণমূলক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি করে আসছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করছে তারা। ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিরোধী দল তাদের দাবি জোরালো করে। ফলে ৩রা জানুয়ারি থেকে পুলিশ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় অফিস সিল করে রেখেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে অবরুদ্ধ করে রাখে। বিরোধীদের সব রাজনৈতিক সভা নিষিদ্ধ করে পুলিশ। তবে ক্ষমতাসীন দলকে সমাবেশ করতে অনুমতি দিয়েছে তারা।
বিরোধী দলের ৫ই জানুয়ারি থেকে সড়ক অবরোধের ফল হিসেবে বাংলাদেশে সহিংসতা তীব্র হয়েছে। শ’ শ’ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তাতে নিরপরাধ অনেক যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক পুড়ে মারা গেছেন না হয় আহত হয়েছেন। দু’ ডজনের বেশি মানুষ তাদের প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে পরিবহনে আগুন দেয়ায় কমপক্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। অনেক হামলা হচ্ছে পুলিশের সামনে। কিন্তু সবক্ষেত্রে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। এমনও ঘটেছে, পুলিশ যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে তারা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব বিষয়ক শাখার স্থানীয় কর্মী। তাদের কাছে পাওয়া গেছে পেট্রোল বোমা। তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গঠন না করে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। ১১ই জানুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিরোধীদের বিচার বহির্ভূত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়ার হুমকি দেন, ১৫ই জানুয়ারি খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম বিরোধীদের সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বুলেট ব্যবহারের হুমকি দেন। পুলিশ, প্রসিকিউশন ও বিচারবিভাগ এতটাই দলীয়করণ করা হয়েছে যে, চলমান বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সুবিচার আশা করা উচিত নয়। শাসক দল সকল প্রতিষ্ঠানকে বশে নিয়েছে। দেশের সকল প্রতিষ্ঠান সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে আচরণ করছে। জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি কর্তৃপক্ষের কাছে সরকারি কর্তৃপক্ষের হাতে হোক বা এর বাইরের কারো হাতে হোক- সকল হত্যাকা-ের নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন পর্যবেক্ষণ করছে যে, আইনি প্রতিষ্ঠানসমূহের রীতি-নীতি সমপূর্ণ অকার্যকর হয়েছে গত কয়েক দশকে। এ সকল প্রতিষ্ঠান যে কোন সময়ের চেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশে তাই ‘সংঘটিত হত্যাসমূহের নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত’ সম্ভব নয়। শুধু আন্তর্জাতিক বিচার সংস্থাই (মেকানিজম) পারে ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের প্রতি প্রতিকার দিতে, যদি এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আন্তরিকতা দেখায় তারা।

No comments

Powered by Blogger.