লালবাগে বোমায় উড়ে গেল যুবকের কব্জি

লালবাগে বোমায় উড়ে গেছে যুবকের কব্জি। পুলিশ জানিয়েছে, আহত যুবক বোমা তৈরি করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে মহাখালীর একটি মেসে অভিযান চালিয়ে বনানী থানা শিবিরের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মেস থেকে শতাধিক হাতবোমা, গান পাউডার ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে পুলিশ নাটক সাজিয়েছে। গ্রেপ্তার পাঁচজনের অভিভাবকরা এক বিবৃতিতে আটককৃতদের আদালতে না তুলায় বিচারবহির্ভূত হত্যার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। লালবাগের ঢাকেশ্বরী রোডের ৩১/২ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসায় বিস্ফোরণে আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিস্ফোরণে মাহবুবুর রহমান বাপ্পী (২৫), তার বোনঝি আজিমপুর গালর্স হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী হ্যাপী আক্তার (১৪) এবং প্রতিবেশী ছয় বছর বয়সী শিশু শাবরান আহমেদ আহত হন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর ডান হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অন্য দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পুলিশের দাবি, ওই বাসায় বোমা তৈরি করা হচ্ছিল। বোমা তৈরি করতে গিয়েই এ ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই বাড়ির বাসিন্দা গাজী ফারুক, শামীম আহমেদসহ ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মফিজউদ্দীন আহমদ বলেন, ওই বাসায় বোমার স্প্লিন্টারসহ নানা আলামত পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হ্যাপীর মা পলি আক্তার জানান, এ মাসেই তারা ওই বাসা ভাড়া নেন। বাপ্পীর পরিবার তাদের পাশের বাসায় ভাড়ায় ওঠেন। প্রতিবেশী হিসেবে তার মেয়ে হ্যাপি ওই বাসায় গেলে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাপ্পীদের বাসায় রুম হিটার ও লাইট বিস্ফোরণে তারা আহত হন। লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বাপ্পী সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। এদিকে, বুধবার ভোরে মহাখালীর টিবি গেইট এলাকার চ-ব্লক ১৩৩/১ নম্বর আমিনুল ইসলাম ভিলা নামে একটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বনানী থানা শিবিরের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, বনানীর ওই বাসা থেকে ১৩০টি অবিস্ফোরিত ককটেল, দুই লিটার পেট্রল, বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত ১০ কেজি পাথরের গুঁড়া, এক কেজি গান পাউডার, ১২টি স্কসটেপ,  তিন কেজি ধারালো চার কোণাবিশিষ্ট প্যারেক,  তিন কেজি তুলা, একটি কাঁচি, ১৫টি জর্দার খালি কৌটাসহ সংগঠনের বইপত্র উদ্ধার করা হয়। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ভূঁইয়া মাহবুব হোসেন জানান, ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় গ্রেপ্তারকৃতরা বোমা তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। প্রশিক্ষণ নিয়ে বোমা তৈরি করার পাশাপাশি তারা বোমা নিক্ষেপেও পারদর্শী। এছাড়াও তারা বোমা তৈরি করে রাজধানীর অন্য এলাকার শিবির কর্মীদের সরবরাহ করতো বলে জানান ওসি। চারকোণা বিশিষ্ট পেরেক সম্পর্কে ওসি জানান, তারা প্রথমে রাস্তায় পেরেক ছেড়ে দিয়ে চাকা পাংচার করে। পরে গাড়ি থেমে গেলে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আটককৃতরা হচ্ছেন- বনানী থানা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানার চরচৈলাদি এলাকায়। জয়নাল আবেদিনের গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী থানার কলোনিপাড়ার বাঁশবাড়িয়ায়। তিনি বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি (অনার্স) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আরিফুজ্জামান আরিফ ঢাকা পলিটেকনিকের আর্কিটেক্ট বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি মেহেরপুর জেলার হঠাৎপাড়া এলাকায়। খালিদ সাইফুল্লাহর বাড়ি ঝিনাইদহের ছোট কামারকু-ু  এলাকায়। আতিয়ার রহমান সরকারি তিতুমীর কলেজে ইংরেজি (অনার্স) শেষ বর্ষের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা থানার দক্ষিণ উল্লাহ এলাকায়।
বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার আশঙ্কা পরিবারের:  গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ ছাত্রকে বুধবার আদালতে হাজির না করায় উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের অভিভাবকরা। তাদের সন্তানদের আদালতে না তুলে ‘বন্দুকযুদ্ধ’র নাটক সাজিয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। বুধবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আমাদের পাঁচ সন্তানকে রাতে পুলিশ আটক করলেও বুধবার দিনে আদালতে না তোলায় আমরা উদ্বিগ্ন। এমনিতে পুলিশ ঘুমন্ত  অবস্থায় তাদেরকে আটক করে বোমাসহ আটকের নাটক সাজিয়েছে। তার ওপর যখন তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি, তখন আমাদের মাঝে আশঙ্কা কাজ করছে। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের মনে হচ্ছে, তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাতে অভিযানের নাম করে আইন-বহির্ভূতভাবে হত্যা করতে পারে। তারা বলেন, আমাদের সন্তানরা যদি কোন অপরাধ করে থাকে, তাহলে এর জন্য দেশের আইন মেনেই বিচার হওয়ার কথা। কিন্তু পুলিশ বেআইনিভাবেই তাদের আদালতে হাজির করেনি। তারা এ অবস্থায় সুবিচারের দাবিতে সরকার ও পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিবৃতিদাতারা হচ্ছেন, মোস্তাফিজুর রহমানের পিতা মো. হারুনুর রশিদ, খালিদ সাইফুল্লাহর পিতা আবদুস সাত্তার, আরিফুজ্জামানের পিতা হাবিবুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমানের বড় ভাই মো. মাহমুদুল হাসান।

No comments

Powered by Blogger.