বর্জ্যে বর্জ্যে দূষিত সুরমা by সুমনকুমার দাশ

(কী নেই এখানে! বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁর উচ্ছিষ্ট, ময়লা-আবর্জনা থেকে শুরু করে কলকারখানার বর্জ্য—সবই ভাসছে সুরমা নদীতে। ১৪ জানুয়ারি সিলেট নগরের চাঁদনীঘাট এলাকা থেকে তোলা ছবি l আনিস মাহমুদ) যত দূর চোখ যায়, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল আর ময়লা-আবর্জনা পানিতে ভাসছে। সুরমা নদীতে কয়েক মাস ধরে এমন দূষণ চলছে। সিলেট নগরের অংশে অবস্থিত নদীতীরের অন্তত নয়টি এলাকায় নিয়মিত আবর্জনা ফেলার কারণে এ দূষণ দেখা দিয়েছে বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর কিনব্রিজ এলাকার ডানে ও বাঁয়ে অন্তত আধা কিলোমিটার করে প্রায় এক কিলোমিটার স্থানে দূষণের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। এসব স্থানে প্লাস্টিক ও বোতলজাত পরিত্যক্ত সামগ্রীর পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল বর্জ্য, সুপারি ও নারকেলের ছোলা, পচা সবজি ভাসছে। এ ময়লা পানিতে গোসলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করায় নদীতীরবর্তী মানুষেরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
১৪ জানুয়ারি দুপুরে নদীতীরের তোপখানা এলাকার বাসিন্দা আজমল মিয়া গোসল করতে এসেছিলেন। তিনি জানান, বিকল্প না থাকায় অনেকেই নদীতে গোসল করেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে নদীর পানিতে দূষণ চরম মাত্রায় পৌঁছার কারণে অনেকের শরীরে চুলকানিসহ নানা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
সিলেটের সিভিল সার্জন আজহারুল ইসলাম জানান, নদী দূষণের কবলে পড়ায় সুরমার পানিতে যাঁরা গোসল বা গৃহস্থালির কাজ সারছেন, তাঁদের নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চর্মরোগ, কিডনি নষ্ট, জীবনহানিকর কৃমির প্রবণতা, পেটের পীড়া, যকৃতের অসুস্থতা তীব্রভাবে দেখা দিতে পারে। এর বাইরে সেখানের জীবাণু থেকে ক্যানসার, যক্ষ্মা ও কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পর্যন্ত রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শেখঘাট, কাজিরবাজার, তোপখানা, চাঁদনিঘাট, কালীঘাট, মাছিমপুর, কদমতলী ঘাট, কুশিঘাট, টেকনিক্যাল রোড ঘাট এলাকায় নদীতীরে স্থানীয় লোকজন নিয়মিত হোটেল-রেস্তোরাঁর পচা ও উচ্ছিষ্ট খাবারসহ নানা রকমের বর্জ্য ফেলছেন। তীরে ফেলার কারণে এসব বর্জ্য গড়িয়ে পানিতে পড়ছে। কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে এসব বর্জ্য ফেললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দূষণ রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে তীরের দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। নগরবাসীর একমাত্র হাঁটাচলার স্থানটিই হচ্ছে সুরমা নদীর পাড়। আর দূষণে বিপর্যস্ত সুরমার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশটি তাই পথচারীদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শেখঘাট, কাজিরবাজার, তোপখানা, চাঁদনিঘাট, কালীঘাট, মাছিমপুর, কদমতলী ঘাট অংশে নগরের বড় পাইকারি হাটগুলো অবস্থিত। এ কারণে এসব এলাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আধিক্য বেশি। ব্যবসায়ীরা তাঁদের উচ্ছিষ্ট ও পরিত্যক্ত সামগ্রী কখনো নদীর তীরে আবার কখনো সরাসরি নদীতেই ফেলে দিচ্ছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মো. ছালাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, ময়লা ফেলে নদীদূষণ ঠেকানো ও সার্বিক তদারকির দায়িত্ব সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, দূষণ ঠেকাতে প্রায়ই নদীতীরের এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। রাতের আঁধারে অনেকে নদীতে বর্জ্য-আবর্জনা ফেলায় দোষী ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। দূষণ ঠেকাতে স্থানীয় লোকজন নিয়ে সচেতনতামূলক বৈঠকও করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.