৫০০ কোটি টাকার ঋণ ১২ বছরের জন্য পুনর্গঠন! by মনজুর আহমেদ

৫০০ কোটি টাকা বা তার বেশি বড় অঙ্কের ঋণ ১২ বছরের জন্য পুনর্গঠন হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এর একটা প্রাথমিক বা খসড়া নীতিমালা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম বা জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক দলের বৈঠকে গতকাল বুধবার নীতিমালাটি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইজার, প্রধান অর্থনীতিবিদকে নিয়ে এই জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক দল গঠিত। এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণও থাকতে পারে। আবার কিছু চলমান ঋণও পুনর্গঠনের আওতায় আসতে পারে। খসড়া অনুসারে ঋণগুলো পুনর্গঠন করতে ব্যাংকের পর্ষদ এককালীন জমা বা ডাউন পেমেন্টের হার নির্ধারণ করবে। তবে তা কমপক্ষে মোট ঋণের ১ শতাংশ হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত ২১ ডিসেম্বর কয়েকটি বড় গ্রুপের ঋণ কেস-টু-কেস বা প্রতিটির জন্য পৃথক বিবেচনায় পুনর্গঠনের আলোচনা উঠলে পর্ষদ একটি নীতিমালা করার নির্দেশনা দেয়। নীতিমালাটি তৈরি করে পর্ষদের কাছে তা উপস্থাপন করতে বলা হয়েছিল। পর্ষদের নির্দেশনা অনুসারেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এস এম রবিউল হাসানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
সূত্র জানায়, কমিটি চারটি বিষয়কে পুনর্গঠনের নীতিমালাতে প্রাধান্য রেখে তাদের প্রস্তাব হাজির করে। এগুলো হলো ঋণ পরিশোধের সময়, এককালীন জমা বা ডাউন পেমেন্ট, গ্রেস বা মেরেটরিয়াম পিরিয়ড ও সুদের হার। খসড়া নীতিমালায় সুদের হার নির্ধারণের দায়িত্ব ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে তা যেন ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কম না হয়, সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ নিজের মত প্রকাশ করে বলেন, পুনর্গঠন যদি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে ভালো গ্রাহকদের কথা মনে রাখতে হবে। সুদের হার কোনোভাবেই বাজারভিত্তিক সুদের চেয়ে কম হতে পারবে না। এককালীন জমা কমপক্ষে আড়াই শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাবও দেন তিনি। তিনি ঋণ পরিশোধের সময় ১২ বছরের কম করতেও পরামর্শ দেন।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘তবে যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই একবার পুনর্গঠন করেছে বা তিনবার পুনঃ তফসিল করেছে, তাদের ক্ষেত্রে এককালীন জমা ৬০ শতাংশ নিতে হবে। আর তাদের সুদের হার কোনোভাবেই বাজারভিত্তিক সুদের চেয়ে কম হওয়া যাবে না।’ তিনি পুনর্গঠিত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলেই তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন। খসড়া নীতিমালা প্রণয়নে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার উদাহরণ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, একবারের বেশি এ সুযোগ কেউ নিতে পারবে না। পুনর্গঠনের সুযোগ নেওয়ার পর যদি কোনো গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠান নিয়মমতো ব্যাংকের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তবে ব্যাংক তার বিরুদ্ধে দেউলিয়া আদালতে যাবে। যদিও বাংলাদেশে দেউলিয়া আইনটি কার্যকর হয়নি এবং এখন পর্যন্ত দেউলিয়া আইনে কাউকে দেউলিয়া ঘোষণার পর তার সম্পদ ব্যাংকের আওতায় আনা যায়নি।
বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদে গত ২১ ডিসেম্বর দেশের শীর্ষ ২০ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ঋণের তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছিল। জানা গেছে, এদের কাছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বা দেশের মোট ঋণের ১০ ভাগের মতো রয়েছে। এই ২০ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে থাকা ঋণের আড়াই শতাংশের মতো ঋণ খেলাপি হয়ে আছে। ব্যাংক খাতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে ৫৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ হয়েছে; যা ওই সময় পর্যন্ত মোট বিতরণ করা প্রায় ৪ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা ঋণের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
উল্লেখ্য, নানা অনিয়ম করে বের করে নেওয়া ঋণসহ বেক্সিমকো গ্রুপের ৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাংকগুলোতে চলছে। এর পরই অন্যদেরও এ সুযোগ দিতেই নীতিমালাটি করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.