ফুল- লবঙ্গলতা by সৌরভ মাহমুদ

(লবঙ্গলতার ফুল। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান থেকে গত এপ্রিলে তোলা l ছবি: লেখক) পাহাড়ি ছড়ার পথে গত বছরের মধ্য গ্রীষ্মে ট্রেকিং করছি। কাঁধে ব্যাগপ্যাক, হাতে দুটি টেলিলেন্সের ক্যামেরা। বন্ধুর পথ। ভেজা পাথরে পা ফসকে যেকোনো সময় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। ঘণ্টা দুয়েক এভাবেই হাঁটতে হবে ছড়ার পথে। বন্য হাতির ভয়ও আছে। তার পরও হেঁটে চলতে হয়, ক্লান্ত হতে হয়। পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য এবং যখন কোনো বিরল পাখি কিংবা বনফুলের দেখা মেলে, তখন ক্লান্তি নিমেষেই হারিয়ে যায়। সেদিন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানেরই একটি ছড়ার পথে অনেক প্রজাতির বুনো গাছপালার ফুল ও পাখির দেখা পেলাম, যা অতীতে কখনোই দেিখনি। আমাদের পাহাড়ের গাছপালার প্রজাতির এখনো অধিকাংশ শনাক্ত করা যায়নি। উল্লেখযোগ্য গবেষণাও হয়নি।
আগে লেবু গোত্রের অনেক ফলের বৃক্ষ দেখেছি। কিন্তু লেবু গোত্রের লতাগাছ কখনোই চোখে পড়েনি। কাপ্তাই বনে গিয়ে ছড়ার পথে দুটি বড় লবঙ্গলতার ঝাড় দেখেছি। ছড়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় বনফুলের সুগন্ধ পাই। হন্যে হয়ে ফুলের গাছটিকে খুঁজতে থাকি। তারপর একটি গাছতলায় কিছু ফুলের ঝরে পড়া পাপড়ির দেখা পাই। তারপর ওপরের দিকে তাকিয়ে বিরল এ লতার দেখা পাই এবং নমুনা সংগ্রহ করি।
এটি কাঁটাযুক্ত কাষ্ঠল লতা, পাহাড়ি বড় গাছকে আঁকড়ে ধরে বাড়ে এবং ছড়ার অংশে লতার শাখা ঝুলে পড়ে। ঝুলে পড়া শাখায় পাতার গোড়া থেকে ফুল আসে। ফুলের রং সাদা। লেবু ফুলের মতো। পাপড়ি লম্বাটে ও পাতলা। রোদ বাড়লে ও একটু বাতাস বইলে পাপড়ি ঝরে পড়ে এবং প্রবহমান ছড়ার পানির সঙ্গে দূরে কোথাও হারিয়ে যায়। অনেক সময় পাথরে বাধা পেয়ে এক জায়গায় অনেক পাপড়ি জমে থাকে। এ লতার বৈজ্ঞানিক নাম Paramignya scandens।
এ লতার ফুলের প্রবল সুগন্ধি। পাহাড়ি ছড়ার পথ ধরে হেঁটে গেলে আপনিও সেই সৌরভ অনুভব করতে পারেন। তবে যেতে হবে এপ্রিল মাসে। যখন ফুল ফোটা শুরু হয়। এ লতাকে পাহাড়িরা বনলেবু বলে। লবঙ্গলতা নামটি নিসর্গী অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা তাঁর ভিষক বাবা চন্দ্রকান্ত শর্মার কাছ থেকে জেনেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি ছেলেবেলায় সিলেটের জঙ্গলে পেয়েছিলেন। ফল লেবুর মতো গোল।
লবঙ্গলতা আমাদের দেশের একটি বিপন্ন উদ্ভিদ। বসতি ধ্বংসের ফলে এ লতাগাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ছড়ার কাছাকাছি পরিবেশে জন্মে। এ গাছকে আমাদের যেমন বন্য পরিবেশে টিকিয়ে রাখা দরকার, তেমনি বনের পরিবেশের বাইরে, যেমন উদ্ভিদ উদ্যানে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাগানে লাগিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এতে এ ফুলের প্রবল সুগন্ধি ফুলপ্রেমীরা উপভোগ করতে পারবেন এবং গাছটি সবাই চিনতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.