বিস্ফোরণে আহত ছাত্রদল নেতা বাপ্পীর মৃত্যু

(ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন বাপ্পী। ছবিটি বুধবার তোলা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মারা যান তিনি। ছবি: ফোকাস বাংলা) রাজধানীর লালবাগে বিস্ফোরণে আহত মাহবুবুর রহমান ওরফে বাপ্পী (২৫) আজ বৃহস্পতিবার ভোরে মারা গেছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।  হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক বলেন, ভোর পাঁচটার দিকে বাপ্পী মারা যান।  পুলিশের দাবি, বাপ্পী নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে ছাত্রদল সূত্র জানিয়েছে, তিনি নিউমার্কেট থানা শাখার বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।  পুরান ঢাকার লালবাগের একটি বাসায় গতকাল বুধবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বাপ্পীর ডান হাত কনুই পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিস্ফোরণে তাঁর ভাগনি হ্যাপি আক্তার (১২) ও ভাগনে লিপন (৬) জখম হয়েছে। ঘটনার পর আহত অবস্থায় এই তিনজনকে পুলিশের পাহারায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় পুলিশের লালবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রবিন রহমান বাদী হয়ে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি মামলা করেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বাপ্পী, তাঁর বোন ঝুমুর আক্তার ও তাঁর স্বামী আবদুল হাকিম। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও পাঁচ-ছয়জনকে। লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আজগর বলেন, তদন্ত চলছে। আলামত পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গতকাল চিকিৎসকেরা জানান, বিস্ফোরণে বাপ্পীর ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত ও বাঁ হাত ঝলসে গেছে। হ্যাপির মুখমণ্ডল, হাত এবং লিপনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মুখমণ্ডল, হাত ও পা ঝলসে গেছে। বাপ্পীর ১৭ শতাংশ, হ্যাপির ১৯ ও লিপনের শরীর ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে।  পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে বাপ্পীর ডান হাত উড়ে যায়। তিনি কাঁটাবনের ‘বোমা বাপ্পী’ হিসেবে পরিচিত।
এ ঘটনায় আহতরাসহ ১০ জনকে আটক করার কথা গতকাল জানিয়েছিল পুলিশ। এর মধ্যে বাপ্পী আজ সকালে মারা গেছেন। গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাপ্পীর বোন ঝুমুর প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, বোমার বিস্ফোরণে নয়, কক্ষ গরম করার বড় লাইট বিস্ফোরণে তাঁর মেয়ে হ্যাপি, ভাই বাপ্পী, বোনের ছেলে লিপন আহত হয়। তিনি একটু দূরে থাকায় কিছু হয়নি।
ঝুমুরদের সঙ্গে লালবাগের ঢাকেশ্বরী সড়কের ২৯/২ নম্বর পাঁচতলা বাড়ির দোতলায় থাকতেন বাপ্পী। তাঁর ভগ্নিপতি আবদুল হাকিম। লিপন মা-বাবার সঙ্গে কাঁটাবনে থাকে। খালার বাসায় বেড়াতে এসেছিল। বাপ্পীদের বাসার পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন বাড়ির মালিক আবুল কাশেম।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কাশেমের স্ত্রী সুফিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস আগে বাপ্পী নিজেকে টাইলসের দোকানের কর্মচারী ও ভগ্নিপতি হাকিমকে গাড়িচালক পরিচয় দিয়ে দুই কক্ষের বাসা ভাড়া নেন। গতকাল বেলা তিনটার দিকে ওই বাসায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দে বাড়িটি কেঁপে ওঠে। বিদ্যুৎও চলে যায়। ওই বাসা থেকে ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ চিৎকার শোনা যায়। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন বাড়ি ধসে পড়েছে। বিদ্যুৎ এলে দেখেন পাশের বাসার স্টিলের দরজা খোলা। পুরো দোতলা ধোঁয়াচ্ছন্ন। আগুনও জ্বলছিল। তাঁরা চিৎকার করে আশপাশের লোকজনকে ডেকে এনে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভান। পরে আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দল এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল।
ডিবির পরিদর্শক সফিউল্লাহ শেখ বলেন, হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেখানে বিস্ফোরকের আলামত পাওয়া গেছে। বিস্ফোরণের পর কক্ষে আগুন ধরে যাওয়ায় পানি ছিটিয়ে নেভানোর কারণে পোড়া বিস্ফোরক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে। বিকেলে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সামনের কক্ষে থাকা চৌকিটি ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়ে আছে। লেপ-তোশক, পোড়া কাপড়চোপড় ও মালপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজউদ্দিন বলেন, বিস্ফোরণস্থল দেখে মনে হয়েছে চৌকির ওপর বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটে। বাপ্পী কাঁটাবনের বোমা বাপ্পী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে যেতেন। তিনি বোমা বানাতেন এবং সরবরাহ করতেন। বিস্ফোরণস্থল থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.