মন্ত্রীর এলাকায় মিছিল করলে গুলি by জাবেদ রহিম বিজন

‘মন্ত্রীর এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করা যাবে না। করলে গুলি করে দেয়া হবে।’ অব্যাহতভাবে পুলিশের এই থ্রেটে মাঠে নেই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের এলাকা আখাউড়া বিএনপি। আর কসবা উপজেলায় ৫ই জানুয়ারির পর থেকে ঘর ছাড়া বিএনপি। আর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের এলাকা নাসিরনগর বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতার দাবি, তাদের এখানে দলের ৫ নেতাকর্মী এক জায়গায় জড়ো হতে পারছেন না। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি। তারা অবরোধ-আন্দোলনে নেই। উপজেলা বিএনপির সাবেক এক নেতা বলেছেন, তারা টাকা দিয়ে কমিটি কিনে এনেছেন। তখনই চুক্তি হয়েছে তারা কোন আন্দোলন করবেন না। উপজেলা উপজেলায় নেতাকর্মীদের নানা অজুহাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবরোধ-আন্দোলন সীমিত হয়ে পড়েছে জেলা শহরের কয়েকটি পয়েন্টে। মূলত টিএ রোডের একটি অংশেই ককটেল ফোটানো ও গাড়ি ভাঙচুর চলে বিক্ষিপ্তভাবে। তবে কয়েকটি মামলা ও বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছেন এখানকার নেতাকর্মীরাও। জেলা বিএনপির বড় নেতাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না এখন। পুলিশের করা মামলার হিসাবে এ ক’দিনে কোন এলাকার নেতাকর্মীরা অবরোধ-আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এর প্রমাণ রয়েছে। অবরোধের ১৬ দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মামলা হয়েছে মোট ১০টি। এর মধ্যে ৮টি মামলা হয়েছে শুধু জেলা সদরের ঘটনায়। আর ২টি মামলা কসবায়। এসব মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ৪৮৭ নেতাকর্মীকে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও প্রায় ৭০০ জনকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যে জেলা শহর আর কসবা উপজেলা ছাড়া কোথাও অবরোধ-আন্দোলনে দেখা মিলেনি বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের। তবে কোন কোন উপজেলার নেতাকর্মীরা দাবি করেন, তারা পুলিশের থ্রেটে মাঠে নামতে পারছেন না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে বন্দরনগরী আশুগঞ্জ উপজেলায়। এখানকার বিএনপি নেতারা পুরোপুরি নীরব। ছোটখাটো একটি মিছিলও করেননি তারা। উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, অবরোধের এ ১৫-১৬ দিনে তারা একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটেও দেখেননি, আন্দোলন করবেন তো দূরে থাক। মাস দেড়েক আগে এ উপজেলায় বিএনপির নতুন কমিটি হয়। এতে সভাপতি হন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় বিশিষ্ট ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী মো. নাছির আহমেদকে। আবু আসিফ আহমেদ ব্যস্ত উপজেলা পরিষদের কাজকর্মে। আর নাছির ব্যস্ত তার ঠিকাদারি ব্যবসায়। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জকির হোসেন বলেন, বিএনপির বর্তমান কমিটির নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, আন্দোলনের জন্য তারা কমিটি আনেননি। টাকা-পয়সা খরচ করে তারা এ কমিটি কিনেছেন। তখনই জেলার নেতাদের নাকি বলেছেন তারা আন্দোলন করবেন না। তিনি আরও বলেন, মানুষের কাছ থেকে শুনি তারা উল্টো জেলার নেতাদের আন্দোলনের সমালোচনা করেন। বলেন, তারা তো জেলা শহরের টিএ রোডের একটি গলিতে আন্দোলন করেন শুধু। মেইন রোডে আসতে পারেন না। আমরা সে রকম আন্দোলন করবো না। করলে ব্যাপকভাবেই করবো। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদের মোবাইল নম্বরে ফোন করে পাওয়া যায়নি। বিজয়নগর উপজেলায় কোন উত্তাপ নেই। সেখানে বিএনপির কোন কমিটিই নেই। সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান জেলা সদরের একটি মামলায় আসামি হয়েছেন। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে। সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার মাস্টারসহ অন্য নেতাদের এলাকায় অবস্থান আছে। তারা মাঝেমধ্যে সীমিত জায়গায় মিছিল বের করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই মিছিল শেষ করেন। অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মোড় থেকে উপজেলা পরিষদের গেট পর্যন্ত তাদের মিছিলের সীমানা। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপি মাঠে নেই। সূত্র জানিয়েছে, শুধু এ অবরোধ-আন্দোলন বলে নয়, কয়েক বছর ধরে এ উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক কোন কর্মকা- নেই। ঢাকায় কোন হোটেল-রেস্তরাঁয় বসে দলের সভা-সমাবেশ করেন উপজেলার শীর্ষনেতারা। এলাকায় আসেন শুধু কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। আখাউড়া উপজেলায় ৫ই জানুয়ারি বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল করেন। মিছিল শেষে সড়ক বাজার মায়াবী সিনেমা হলের এখানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে তা প- করে দেয়। এরপর থেকে উপজেলা সদরে আর দেখা যায়নি বিএনপিকে। তবে অবরোধের এই ক’দিনে গঙ্গাসাগর, গাজীরবাজার, ধরখার এসব স্থানে ছোটখাটো মিছিল হয়েছে বলে জানায় দলীয় সূত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, মিছিল করার প্রস্তুতি নিলেই পুলিশ নেতাদের ফোন করে থ্রেট দেয়। বলে মন্ত্রীর এলাকা এখানে মিছিল করবেন না। মিছিল করলে লাঠিপেটা করবো, তাতে না হলে গুলি করবো। কসবায় ৫ই জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। এতে আহত হন ওসিসহ ২০ জন। এ ঘটনায় মামলা হয় দুটি। এসব মামলার আসামি করা হয়েছে ৬২ জনকে। এরপর থেকেই মাঠে নেই বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের দেখা যাচ্ছে না কোথাও। এখানে বিএনপি-জামায়াতের ভিত শক্তিশালী বলে হিসাব করা হয়। আগের আন্দোলনগুলোতে এর প্রমাণও দিয়েছেন তারা। নবীনগরে মাঝেমধ্যে মিছিল করে বিএনপি। এ উপজেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মঞ্জু জেলা সদরের এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন, অবরোধের প্রথম দিন তারা জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু মাঠে নামতে পারেননি। পুলিশ নিয়মিত ভয়ভীতির মধ্যে রেখেছে। দলের ৫ নেতাকর্মী এখানে এক জায়গায় জড়ো হতে পারেন না বলে জানান ওই নেতা। এখানে মামলায় জড়িয়ে দেয়ার থ্রেট আসে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকেও। জেলা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, অবরোধ-আন্দোলনকেন্দ্রিক এ পর্যন্ত করা ১০টি মামলার আসামি হিসেবে ৩৯ বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর সব মিলিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০০ জনকে। এরা সবাই দলীয় নেতাকর্মী। গ্রেপ্তারকৃত উল্লেখযোগ্য নেতারা হচ্ছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার খোকন, অর্থ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন, তথ্য ও গভেষণা সম্পাদক সামছুজ্জামান চৌধুরী কানন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মঞ্জু, জেলা বিএনপি নেতা উত্তম ঘোষ, পৌর বিএনপির সহসভাপতি হাসেম আল মামুন, সদর উপজেলা যুবদল নেতা সাহেদুল ইসলাম সাহেদ, জেলা ছাত্রদল সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. আক্তার, পৌর যুবদল নেতা আসাদুল হক মেরাজ ও শাহনূর, আখাউড়া জামায়াত নেতা মো. বোরহান উদ্দিন, কসবা পৌর যুবদল নেতা দুলাল মিয়া, কসবা পৌর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সহিদুল খান।

No comments

Powered by Blogger.