চাঁপাই নবাবগঞ্জে যৌথ অভিযানের পরিকল্পনা by দীন ইসলাম

মহাজোট সরকারের গেল মেয়াদে সাতক্ষীরা জেলায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ এবার চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে সমন্বিত অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। এ সমন্বিত অভিযানে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি অংশ নেবে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে যৌথ অভিযান পরিচালনার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে গতকাল একটি চিঠি দিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ। চিঠির কপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবকে দেয়া হয়েছে। চিঠিতে যৌথ অভিযান পরিচালনার কারণ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ মানবজমিনকে বলেন, চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের লোকজন খুবই খারাপ। তারা আইন-কানুন, প্রশাসন কিছুই মানতে চান না। কোন কিছুর তোয়াক্কা করেন না। দেশের অবস্থা বুঝতে চান না তারা। শুধু পটকা ও পেট্রল বোমা ফুটাতে জানেন তারা। তিনি বলেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দর তাদের জন্য নেয়ামত। এ স্থলবন্দরটি বন্ধ করে দিতে চান তারা। দেশের কোন এলাকার মানুষের মধ্যে এমন অবস্থা দেখিনি। স্থলবন্দরে যারা কাজ করেন সবাই তাদের লোক। যৌথ অভিযান পরিচালনা হলে শিবগঞ্জের পরিস্থিতি শান্ত হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আশা করছি পরিস্থিতি শান্ত হবে। যৌথ অভিযান পরিচালনার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলাধীন সোনা মসজিদ স্থলবন্দরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিনই পণ্যবাহী শত শত ট্রাক বাংলাদেশ ও ভারত অভ্যন্তরে যাতায়াত করে। কিন্তু ইদানীং অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব পণ্যবাহী ট্রাক চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে প্রায়শই নাশকতা সৃষ্টিকারীদের হামলার শিকার হচ্ছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ক্ষতিসহ প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের অন্যান্য এলাকায় অপরাধমূলক তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলেও শিবগঞ্জের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকাংশই জামায়াতপন্থি, এমনকি অনেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও একই বিশ্বাস নিয়ে কাজ করেন। অতীতের রেকর্ড বিবেচনায় দেখা যায় বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ওই এলাকার জনগণের সক্রিয় সহযোগিতার কারণে অন্যান্য এলাকার তুলনায় সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তথা অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেগ পেতে হয়। তাছাড়া এলাকার অধিকাংশ জনগণ কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির। এ কারণে গতানুগতিক প্রক্রিয়ার বাইরে যৌথ অভিযান পরিচালনা ছাড়া ওই এলাকায় সংঘটিত অপরাধ দমন করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। আর এ এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে নাশকতামূলক তৎপরতা আরও বেড়ে যাবে যার প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পড়বে। এমন অবস্থায়, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় জরুরি ভিত্তিতে সাতক্ষীরার মতো সমন্বিত যৌথ অভিযান পরিচালনা-পূর্বক অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে তাদের আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। এর আগে ২০১৪ সালে সাতক্ষীরা জেলায় যৌথ অভিযান পরিচালনার নামে ব্যাপক ধব্বংসযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ওই অভিযানে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের খোঁজার তল্লাশির নামে বাড়িঘরও তছনছ করা হয়। এ অভিযানে নিহত হন জামায়াত-শিবিরের পাঁচ নেতাকর্মী। এবার নতুন করে আরেকটি জেলায় যৌথ অভিযান পরিচালনার জন্য চিঠি দিলেন বিভাগীয় কমিশনার।

No comments

Powered by Blogger.