‘আমি কীভাবে ফাঁকা ক্লাসে বসব’

পাকিস্তানের পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে ভয়াবহ সেই
হামলার পর গতকাল ক্লাসে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। স্কুলের
ফটকে সশস্ত্র পাহারায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে পাকিস্তানের পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। গত ১৬ ডিসেম্বর জঙ্গি হামলায় ওই স্কুলে প্রায় ১৫০ জন নিহত হওয়ার পর গতকাল সোমবার থেকে স্কুলটিতে আবার ক্লাস শুরু হয়েছে। খবর ডন ও এএফপির। গতকাল ওই স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দরের মতো নিরাপত্তা ফটক বসানো হয়েছে। প্রবেশের প্রধান ফটকে ২০ জন সেনা টহল দিচ্ছেন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান শরিফ তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল হঠাৎ স্কুলটিতে উপস্থিত হন। তিনি শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে ধরে আদর করেন। ১৬ ডিসেম্বর হামলার সময় স্কুলটির মিলনায়তনে বেঞ্চের তলে লুকিয়ে মৃত হওয়ার ভান করে প্রাণে বেঁচে যায় ছাত্র শাহারুখ খান। তার দুই পায়ে গুলি করে জঙ্গিরা। সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে গতকাল স্কুলে যায় শাহারুখ। সে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলে, ‘আমি আমার ৩০ জন বন্ধুকে হারিয়েছি। আমি কীভাবে ফাঁকা ক্লাসে বসব? কীভাবে আমি ফাঁকা বেঞ্চগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকব?
আমার মন ভেঙে গেছে। আর স্কুলে যেতে আমার মন চায় না।’ ছেলে মুহাম্মদ জায়েদকে আর্মি পাবলিক স্কুলে পৌঁছে দিতে যান মুহাম্মদ জাহুর। তিনি বলেন, ‘সে (জায়েদ) ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা কথা বলে তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি। আমরা তাকে চার দেয়ালের ভেতর বন্দী করে রাখতে পারি না। আমাদের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।’ জায়েদ বলে, ‘আমার বন্ধুদের দেখতে আমি স্কুলে যেতে চাই। শিক্ষা গ্রহণ শেষে ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাই।’ পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে গত ১৬ ডিসেম্বর ভয়াবহ হামলা চালায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) জঙ্গিরা। এতে ১৩৪ শিশুসহ অন্তত ১৫০ জন নিহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে শীতকালীন ছুটি বাড়িয়ে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গতকাল থেকে পেশোয়ারের ওই স্কুলটিসহ সরকারি-বেসরকারি অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে। প্রাদেশিক সরকারের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) পাওয়ার পর স্কুলগুলো কার্যক্রম শুরু করল। স্কুলগুলোর নিরাপত্তায় সিসি টিভি স্থাপন, ক্যাম্পাসে উঁচু সীমানাদেয়াল নির্মাণ করাসহ সরকারের বেঁধে দেওয়া মানদণ্ড যে প্রতিষ্ঠানগুলো পূরণ করতে পেরেছে, শুধু তাদেরই এনওসি দেওয়া হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো ওই মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে তারা এনওসি পায়নি।

No comments

Powered by Blogger.