গ্রামীণ ব্যাংকের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ!

গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করা হলে বাংলাদেশের কিছুই লাভ হবে না। কেবল বছরের পর বছর ধরে লিঙ্গ সমতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া লাখ লাখ নারী ঋণগ্রহীতা আরো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পোভার্টি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (সিপিডিএস) এবং কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক জাকি ওয়াহাজ গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎবিষয়ক এক যৌথ নিবন্ধে ওই মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করেন, নারী উন্নয়নে বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও বেসরকারি সংস্থাসমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে যে অনন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল, তা এখন হুমকির মুখে। কারণ ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. ইউনূসকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এ জন্য ড. ইউনূসের অবসরের নির্দিষ্ট বয়সসীমা ৬০ বছরের বেশি হওয়ার যুক্তি দেখানো হয়। কিন্তু এর পরপরই গ্রামীণ ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সরকার আইন সংশোধন করেছে যে, যাতে তারা এখন থেকে ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের সদস্য নিয়োগ দিতে পারে। অনেকের মতে এটা হলো সরকারি নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করার তেমনই চরম পদক্ষেপ, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ। বাংলাদেশের সরকারকে সতর্ক করে তারা গত ৯ই জানুয়ারি আন্তর্জাতিক সাময়িকী ইস্ট এশিয়া ফোরামে প্রকাশিত নিবন্ধে আরো লিখেছেন, বাংলাদেশ ২০১৪ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে উন্নতি করেছে। ২০১৩ সালের ৭৫ থেকে ২০১৪ সালে ৬৮তে নেমে এসেছে। চার দশক ধরে বাংলাদেশ যেভাবে লিঙ্গ সমতা অর্জনে সাফল্য দেখিয়ে চলেছে তার পেছনে রয়েছে সামাজিক উন্নয়ন, রাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গ্রামীণের মতো এনজিও’র পথচলা। নারীর দারিদ্র্য বিমোচনে প্রথাগত রীতিনীতি যেখানে কোন উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে গ্রামীণ উদ্যোগ সফল হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে নারী উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন একটি পোস্টার চাইল্ড-এর মর্যাদা নিয়ে আছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার প্রশ্নে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। এশিয়ার সকল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যেও শীর্ষে। গত ২০ বছরে সামাজিক খাতগুলোতে সরকারি বিনিয়োগ অনেক কম হলেও নারীর স্বাস্থ্য সুবিধা ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ বিপুল সংখ্যক নারী গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করছেন। এই চিত্রটি একারণে সৃষ্টি হয়নি যে, সরকার বিপুলভাবে বিনিয়োগ করেছিল। বরং নারীকে উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে দেখার কাজটি বেসরকারি অনুঘটকরা নিশ্চিত করেছে। আর এর মূলে যিনি রয়েছেন তিনি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণের পথিকৃত ড. মুহাম্মদ  ইউনূস। প্রায় চার দশক আগে তিনি নারীকে পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
উল্লেখ্য যে, মালয় ও কেন্ট ভার্সিটির ওই দুই শিক্ষক গত মাসে জাপানভিত্তিক দি ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত নিবন্ধে একই শঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.