ফয়েজের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল পুলিশ

ব্যবসায়ী ফয়েজ আলী সরকারকে গুলি করার দায়ে মামলা করতে চাইলে পুলিশ তা নেয়নি। উল্টো তাকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। চাঁদা দাবি ও গুলি করার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে পুলিশের সেই উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে গতকাল মামলাটি করেছেন। এ ঘটনায় অসহায় হয়ে পড়েছেন ফয়েজ আলীর পরিবার। কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ফয়েজের সম্পৃক্ততা না থাকলেও তার বিরুদ্ধে পিকেটিং ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। ফয়েজ আলীর স্ত্রী রেহানা ফয়েজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই দেশে কি কোন বিচার নাই। গুলি করল পুলিশ। মামলাও করল পুলিশ। এটা কেমন বিচার? সোমবার বিকালে মামলা করার জন্য দক্ষিণখান  থানায় যোগাযোগ করেছিলেন ফয়েজ আলী সরকারের স্বজনরা। ফয়েজ আলীর বড় ভাই  আয়েশ আলী জানান, এসআই জয়নালকে আসামি করে তারা মামলা করার জন্য থানায় যোগাযোগ করেছিলেন। পুলিশ তাদের জানিয়েছে, ফয়েজ আলীর পক্ষে কোন মামালা নেয়া হবে না। পরে তারা জানতে পারেন উল্টো ফয়েজসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। দক্ষিণখানের  আজমপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল, সিফাত আরও  কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ঘটনার পর এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তখন এসআই জয়নালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম অর রশীদ তালুকদার। কিন্তু বিকালেই তিনি তার কথা থেকে সরে যান। ফয়েজ আলী সরকারের প্রতিবেশী নুরুল হাসান জানান, ওসি বিকাল থেকেই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য অবরোধের পিকেটিংকালে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রচার করছেন। এ বিষয়ে গুলিবিদ্ধ ফয়েজ আলী সরকার জানান, তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি একজন ব্যবসায়ী। এ ছাড়া ওই এলাকায় কোন পিকেটিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। এটি পুলিশের সাজানো বলে তিনি দাবি করেন। ফয়েজ আলী জানান, তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন এসআই জয়নাল। গত প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন সময়ে আজমপুরের আইয়ূব মার্কেটে  তার দোকান এসএম নিপু এন্টারপ্রাইজে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন জয়নাল। চাঁদা না দিলে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বানিয়ে মামলায় আসামি করার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এরপরই গত সোমবার এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় তার সঙ্গে ১লাখ ২০ হাজারেরও বেশি টাকা ছিল। তাকে গুলি করে এসআই জয়নাল ওই টাকা নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দক্ষিণখান থানার ওসি শামীম অর রশীদ তালুকদার। তিনি বলেন, তারা মিথ্যা বলছে। পুলিশ কখনও চাঁদা দাবি করতে পারে না। তারা বিএনপি-জামায়াতের লোক। অবরোধের পিকেটিংকালে পুলিশের উপর তারা হামলা করে। এ সময় ধস্তাধস্তিতে এসআই জয়নালের পিস্তল থেকে গুলি বের হলে ফয়েজ গুলিবিদ্ধ হয়। ফয়েজের ভাই আয়েশ আলী বলেন, থানায় যেহেতু আমাদের মামলা নেয়নি আমরা আদালতে মামলা করব। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফয়েজকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা পুলিশ ও দক্ষিণখান থানা পুলিশের তৎপরতা থাকলেও তাকে এখনও গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। দক্ষিণ খান থানার ওসি জানান, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সুস্থ হলেই ফয়েজকে গ্রেপ্তার করা হবে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফয়েজের অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রবীর কুমার সূত্রধর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর দক্ষিণখানের মধ্য আজমপুর এলাকায় ফয়েজের বাম কাঁধে ধরে ঘুরিয়ে কোমরের নিচে এক রাউন্ড গুলি করেন দক্ষিণ খান থানার এসআই জয়নাল। ওই এলাকাতেই গুলিবিদ্ধ ফয়েজ আলী সরকারের বাড়ি। তার পিতার নাম মৃত ইউসুফ আলী সরকার। তার দুই পুত্র রাহাদুল ইসলাম নিপু ও রিয়াদুল ইসলাম রিয়ন।

No comments

Powered by Blogger.