তাইজুলের বিশ্ব রেকর্ড by ইশতিয়াক পারভেজ

নায়ক তো সব সময়ই নায়ক। তাই দেখালেন তাইজুল। শুরুর নায়ক শেষেও নায়ক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের জয়ের নায়ক ওয়ানডে সিরিজের শেষেও নায়ক হয়ে গেলেন। এবারের নৈপূণ্য নজিরছাড়া-নজরকাড়া। নাটোরের ছেলে এবার দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন টেস্টে ১৭ উইকেট পেলেও ওয়ানডে সিরিজে তার সুযোগ ছিল না। প্রথম তিন খেলায় দলে ছিলেন আরাফাত সানি। তিনি সফলও ছিলেন। অন্যদের বাজিয়ে দেখতে এরপর চতুর্থ খেলায় অভিষেকের সুযোগ মেলে লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন। আর পরীক্ষার অংশ হিসেবে গতকাল সুযোগ দেয়া হয় তাইজুল ইসলামকে। আর সুযোগটা পেয়েই সাড়াজাগানো সাফল্য। ৭ ওভার ১১ রান ৪ উইকেট- স্মরণে রাখার জন্য এ বিশ্লেষণটি যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বিধাতা যখন কাউকে ওঠাতে চান তখন আর ঠেকায় কে? দুই ওভারে চার উইকেট। এর মধ্যে পরপর তিন বলে তিনটি। অমর হওয়ার জন্য আর কিছু প্রয়োজন নেই। ওয়ানডে ক্রিকেটের ৪৩ বছরের ইতিহাসে ৩৫৫৩ খেলায় এমন দৃষ্টান্ত এই প্রথম। অভিষেক খেলাতেই হ্যাটট্রিক! ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি ৩৬তম হ্যাটট্রিক হলেও আগের ৩৫ জনের কোনটিই ছিল না অভিষেক ম্যাচে। ওয়ানডের হ্যাটট্রিকের প্রথম কৃতিত্ব পাকিস্তানের জালাল উদ্দিনের। হায়দরাবাদে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৮২ সালে জালাল উদ্দিন প্রথম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েন। বাংলাদেশের ওয়ানডে খেলা শুরু তারও পরে।  তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের তিন জনের নাম যুক্ত হয়েছিল এই তালিকায়। প্রথমে পেসার শাহদাত হোসেন, দ্বিতীয়তে স্পিনার আবদুর রাজ্জাক ও শেষ কৃতিত্ব আরেক পেসার রুবেল হোসেনের। বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে এই তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করলেন তাইজুল ইসলাম। রান কম দিলেও প্রথম উইকেট পান তিনি ষষ্ঠ ওভারে। খেলার ২৭তম ওভার সেটি। প্রথম বলেই লেগ বিফোর উইকেট হয়ে ফেরেন আগের খেলায় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সলোমন মিরে। পরের চার বলে উইকেট নেই। শেষ বলে দ্বিতীয় শিকার হন পানিয়াঙ্গারা। মাঝের এক ওভার পরে নিজের ৭ম ওভারে প্রথম বলেই সরাসরি বোল্ড নাইম্বুকে। পরের বলেই হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা! সবার চোখ তাইজুলের দিকে। নতুন ব্যাটসম্যান এলেন চাতারা। সবার অধীর অপেক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটিযে বল চাতারাকে ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। উল্লাসে ফেটে পড়েন মাঠ ও মাঠের বাইরের কোটি দর্শক। বাংলাদেশের চারটি হ্যাটট্রিকের ৩টিই জিম্বাবয়ের বিপক্ষে। আর একটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
গতকাল পেসার রুবেল হোসেনের পরিবর্তে দলে জায়গা পেয়েছিলেন স্পিনার তাইজুল। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ১১তম ওভারে তাইজুলের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন। তখন জিম্বাবুয়ে ৬২ রানে মাত্র এক উইকেট হারিয়েছে।  বাংলাদেশের বোলারদের তেমন পাত্তাই দিচ্ছিলেন না মাসাকাদজা ও ভুসিমুসি সিবান্দা। কিন্তু বল হাতে নিজের প্রথম পাঁচটি ওভার তাইজুলকে থাকতে হয় উইকেট শূন্য।
অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে সেরা চার বোলারের তালিকাতেও তাইজুল যুক্ত করেছেন নিজের নাম। এর আগে ভারতের বিপক্ষে ৮ ওভার বল করে ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের নজির গড়েন পেসার তাসকিন আহমেদ। তারপরই এখন তাইজুল। তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা সোহাগ গাজীর শিকার ৯.৫ ওভার বল করে ২৯ রানের খরচায় ৪টি উইকেট। আর চতুর্থ স্থানে আছেন রুবেল হোসেন। তার শিকার ৫.৫ ওভার বল করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৩ রান খরচায় ৪টি উইকে।
অন্যদিকে বাংলদেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডেতে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন পেসার শাহদাত হোসেন রাজীব। তিনি ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়েরে বিপক্ষে হারারে স্পোর্টস গ্রাউন্ডে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন। এরপর আবদুর রাজ্জাক দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে হ্যাটট্রিকের তালিকায় ২৭তম স্থানে নিজের নাম খেলান ২০১০ সালে। শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। এরপর চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে রুবেল হোসেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে এ মাঠেই হ্যাটট্রিক করেন।

No comments

Powered by Blogger.