এনজিও কার্যক্রম মনিটরিংয়ে নতুন আইন

বৈদেশিক অনুদান নেয়া বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (এনজিও) মনিটরিংয়ে নতুন আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইন অনুযায়ী অনিয়মের জন্য এনজিও’র নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। গতকাল মন্ত্রিসভা ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৪’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের দু’টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ দু’টি অধ্যাদেশ সমন্বয় করে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্তও রয়েছে সরকারের। এছাড়া আদালত সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো বাতিল করার পর ওই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশগুলোর বাংলায় অনুবাদ করে নতুনভাবে প্রণয়নেরও সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে গত ২রা জুন খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তিনি জানান, নতুন আইনটি সমন্বিত ও বিস্তারিত। এ আইন বৈদেশিক অর্থে চলা এনজিওগুলোর কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আনবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়া আইন অনুযায়ী এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিবন্ধন ছাড়া বৈদেশিক সাহায্য নেয়া এনজিওগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। এ জন্য ব্যুরো থেকে তাদের নিবন্ধন নিতে হবে। ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়া এনজিও প্রকল্প বাস্তবায়নও করতে পারবে না। যে খাতের প্রকল্প ব্যুরো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেবে। খসড়া আইনে ১০ বছরের জন্য নিবন্ধন দেয়ার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নবায়ন করারও সুযোগ রয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাস আগে নবায়নের আবেদন করতে হবে। তিনি বলেন, এনজিওগুলোকে বৈদেশিক অনুদানের হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। বিদেশ থেকে আসা টাকা তফসিলি ব্যাংকের একটি মাদার (প্রধান হিসাব) একাউন্টে রাখতে হবে। খরচের অডিট করে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর কাছে দাখিল করার কথাও বলা হয়েছে খসড়া আইনে। খসড়া আইন অনুযায়ী অনুমোদিত প্রকল্পে বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনতে হলে এনজিওকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশেষজ্ঞ কতদিন দেশে থাকবেন, বেতন কত হবে সব কিছু জানাতে হবে। পার্বত্য জেলায় প্রকল্প নেয়া হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে হবে। পার্বত্য মন্ত্রণালয়, পার্বত্য জেলা আঞ্চলিক পরিষদকে এনজিও’র কার্যক্রম তদারক ও পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আইনে। তিনি বলেন, আইন ভাঙলে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক তদন্ত করে সতর্ক করা, নিবন্ধন স্থগিত, বাতিল ও জরিমানা করতে পারবেন বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন, নারী ও শিশু পাচারসহ ফৌজদারি অপরাধ করলে তা দেশের প্রচলিত ফৌজদারি বিধি অনুযায়ী আলাদা বিচার হবে। এনজিও’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ ও পরিচালনা পরিষদ থাকবে হবে। এদিকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে খসড়া আইনের কয়েকটি ধারা প্রসঙ্গে টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) সহ ১৫টি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (এনজিও) বিরোধিতা করছে। এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। সকলের মতামত রাখা তো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.