প্রধানমন্ত্রী আজ মালয়েশিয়া যাচ্ছেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার তিন দিনের সফরে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাজিব বিন তুন হাজি আবদুল রাজাকের আমন্ত্রণে তিনি এই সফর করছেন। সফরকালে দেশটির সঙ্গে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৪ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সফরকালে যে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো হল- মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে বাংলাদেশী কর্মী প্রেরণের পথ সুগম করতে ২০১২ সালে দুদেশের কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক সংশোধনী সংক্রান্ত প্রটোকল, পর্যটন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টে ভিসা অব্যাহতি বিষয়ক চুক্তি এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ক্ষেত্র প্রসারের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক।
প্রধানমন্ত্রীর ৩০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক কারণে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যোগসূত্র অনেক গভীর। ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে গভীর সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ এ সম্পর্কের সূচনা হয়। দুদেশের মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক যোগাযোগ ও সংস্কৃতির নৈকট্যের ফলে বিদ্যমান সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে গভীরতর হচ্ছে। তবে এ সম্পর্কের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক মালয়েশিয়া সফরের মধ্য দিয়ে। ওই সফরে দুদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়, যা বিগত চার দশকে বহুমাত্রিকতা লাভ করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ ও ২০১০ সালে মালয়েশিয়া সফর করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা ৩ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। আনুষ্ঠানিক আলোচনায় দুদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াদির পাশাপাশি জনশক্তি রফতানি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি, পর্যটন, উচ্চশিক্ষা ও পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় দুই দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে মালয়েশিয়া হতে বাংলাদেশ আমদানি করেছে প্রায় দুই দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য, অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ রফতানি করেছে প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। দুদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাণিজ্য বৈষম্য কমানোর উপায় সম্পর্কে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হবে বলে আশা করা যায়।
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রকৌশল এবং সার্ভিস সেক্টরসহ ১০৩টি প্রকল্পে মালয়েশিয়া প্রায় এক দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ সব বিনিয়োগ প্রকল্পে ১৭ হাজারের অধিক বাংলাদেশী কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ আরও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে, প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। বাংলাদেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরা এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্পর্কে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাবনাগুলো এ আলোচনায় স্থান পাবে।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহত্তম শ্রমবাজার যেখানে বর্তমানে আনুমানিক চার লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশী অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন। মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশভিত্তিক রেমিটেন্সের তালিকায় পঞ্চম বৃহত্তম, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বিবেচনায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের কর্মক্ষেত্রের প্রসার এবং কর্মী নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে এ সফরে বিশেষভাবে জোর দেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.