ডিসেম্বরের পর আন্দোলনের ঘোষণা খালেদার

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের পরেই আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। বলেছেন, ৫ই জানুয়ারি দেশে কোন নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন হলে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় কি করে? আমরা ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে সফল হয়েছি। আমাদের ডাকে মানুষ সাড়া দিয়েছিল, এবারও সাড়া দেবে। ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস, এ মাসে বিজয়ের কর্মসূচি পালন করবো। ডিসেম্বরের পরপরই আমরা আন্দোলনে যাবো। খুনি সরকারকে বিদায় করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবো। অবৈধ সরকারের সকল আইন বাতিল করবো। আন্দোলনে সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে দেশ গড়বো। গতকাল রাতে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, বিদেশীদের সম্পর্কে এভাবে কেউ কথা বলে? সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বিদেশী রাষ্ট্রদূতকে নিয়েও খারাপ ভাষায় কথা বলছেন। বিএনপিকে গালি দিতে দিতে গালি দেয়া তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। এবার বিদেশীদেরও গালি দেয়া শুরু করেছে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছেন।  উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া দক্ষিণ ও মধ্যএশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাইকে ‘দুই আনার মন্ত্রী’ বলে আখ্যায়িত করেন সৈয়দ আশরাফ। একই সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনাকে ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা’র সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, যেখানে বিএনপির সমর্থন বেশি সেখানে সরকার উন্নয়ন করছে না। বগুড়ায় শহীদ জিয়ার জন্ম। সেখানে কোন উন্নয়নই করেনি। চট্টগ্রামে বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। তাই চট্টগ্রামেও কোন উন্নয়ন করেনি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। নির্বাচনকে কিভাবে তারা ম্যানিউপুলেট করে তা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলাম ভোটকেন্দ্রে না যেতে আমাদের আহ্বানে বেশির ভাগ রাজনৈতিদ দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। দেশের ৯৫ ভাগ ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাননি। কোন কোন জায়গায় ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। হিসাব নিকাশ করে দুই দিন পর নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে কত শতাংশ ভোট পড়েছে। এই জন্য সারাবিশ্ব এ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়নি। দেশের জনগণও এ সরকারকে বৈধ সরকার মনে করে না। পিলখানা হত্যাকা-ের তদন্ত ও বিচার নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। তিনি সেদিন প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা এবং বাড়ি বদল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই সঙ্গে অঙ্গীকার করেন ভবিষ্যতে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে। পিলখানা হত্যাকা-ের দিন ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, সেদিন ৫৭ জন চৌকশ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। আমরা সেদিনটিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে সরকারি ছুটির দাবি জানাচ্ছি।
খালেদার মামলার শুনানিতে হট্টগোল
দফায় দফায় সময়ের আবেদন। আদালতের নামঞ্জুর। তুমুল বাক-বিত-া আর হট্টগোল। দুই দফা বিরতি। পাঁচ ঘণ্টার দীর্ঘ শুনানি। এমনই ছিল ঢাকার আলিয়া মাদরাসায় স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের গতকালের চিত্র। এসবের মধ্যেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক ও মামলার বাদী হারুনুর রশীদ সাক্ষ্য দেন। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। পরে মামলার কার্যক্রম আগামী ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণকে ঘিরে আলিয়া মাদরাসায় স্থাপিত আদালতের ভেতরে ও বাইরে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো এলাকাকেই অনেকটা কর্ডন করে ফেলে। শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় চান তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে বিচারের ঐতিহ্য যে কোন আদালত পরিবর্তন চাইলে সঙ্গে সঙ্গে সেই আদালত তার কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। বেগম জিয়ার উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তার কারণে বেগম জিয়া উপস্থিত হননি। আদালত উপস্থিত না হওয়ার আবেদনটি গ্রহণ করেন। দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, আদালত পরিবর্তনের আবেদন করা হয়েছে বিচারকে বিলম্বিত করার জন্য। এই আবেদন করা হলেই বিচারক মামলা স্থগিত করতে বাধ্য নন। তাই সাক্ষ্যগ্রহণে কোন বাধা নেই। আমাদের সাক্ষী প্রস্তুত আছেন। এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় চেয়ে শুনানিতে অংশ নেন সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ পর্যায়ে বিচারক বলেন, আদালত পরিবর্তনের বিষয়ে আমি গত তারিখে আদেশ দিয়েছি। এই গ্রাউন্ডে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি বিবেচনাযোগ্য নয়। আবেদন নামঞ্জুর করছি। আমি রাষ্ট্রপক্ষকে সাক্ষী উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দিচ্ছি। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ আদেশের প্রতিবাদ জানান। তার আইনজীবীরা এসময় আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। দীর্ঘ শুনানি শেষে এ আবেদনও নামঞ্জুর করে আদালত। এ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবির আবেদন জানান। এ আবেদনও নামঞ্জুর হলে তারা আদালতে হট্টগোল করতে থাকেন। এসময় রাষ্ট্র ও দুদকের আইনজীবীদের সঙ্গে তাদের বাক-বিতন্ডা ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.