কর্ণফুলীতে ১০০ টন গম নিয়ে ভাসছে লাইটারেজ by মহিউদ্দীন জুয়েল

চট্টগ্রামে ঘাট শ্রমিকদের একাংশের ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন দেশ থেকে আনা প্রায় ১০০ টন গম নিয়ে কর্ণফুলী নদীতে ভাসছে ৫০টির বেশি লাইটারেজ জাহাজ। কেবল তা-ই নয়, গম ছাড়াও রয়েছে মটর ডাল, সারসহ নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী। পরিস্থিতি সমাধানে কোন ধরনের পদক্ষেপ দেখা না যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে খালাস কার্যক্রম।  সর্বশেষ ধর্মঘট পালন নিয়ে ঘাট শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক শ্রমিক নেতাকে। গতকাল সোমবার সকালে কর্ণফুলী নদীর ১৬ ঘাটে এই ঘটনা। মজুরি বৃদ্ধিসহ ৯ দফা দাবিতে গত রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অবরোধের ডাক দিলেও শ্রমিকদের আরেকটি পক্ষ এর বিরোধিতা করে। সূত্র জানায়, ধর্মঘটে বর্তমানে কর্ণফুলী নদীসহ আশপাশের বিভিন্ন ঘাটে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে দু’-একটি ঘাটে কাজ হয়েছে বলে অনেকে দেখেছেন। ধর্মঘটের সমর্থনে গতকাল ট্রাঙ্ক রোড মাঝিরঘাট সড়ক অবরোধ করে রাখে একটি পক্ষ। সদরঘাট থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইদ্রিস আলী নামের এক শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও মামলা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য দ্রুত চেষ্টা চলছে। আশা করছি, রাতের মধ্যে কোন সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সরজমিন দেখা গেছে, অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে প্রচুর লাইটারেজ জাহাজ বিভিন্ন ঘাটে পণ্য নিয়ে আটকা পড়ে রয়েছে। খালাস বন্ধ থাকায় সেখান থেকে পণ্য গুদামে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিকদের একটি অংশ তাতে বাধা দিচ্ছে। ঘাট গুদাম শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে এই কর্মবিরতি পালন করছে একটি অংশ। অন্যদিকে বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক-শিপিং ব্যবসায়ী জানান, গত দু’দিনের এই ঘটনায় তাদেরকে প্রচুর টাকা লোকসান গুনতে হবে। কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই শ্রমিকরা এই ধর্মঘট ডেকেছে।  কয়েকজন শ্রমিক নেতা জানান, দেশের বাইরে কিংবা ভেতর থেকে নদী পথে যে কোন পণ্যের চালান এলে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের বড় জাহাজ থেকে নেয়া হয় ছোট জাহাজে। এরপর সেগুলো ভিড় করে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে। সেখান থেকে পণ্য খালাস করে শ’ শ’ শ্রমিক। তারা ঘাট শ্রমিক নামে পরিচিত। এরা  জাহাজ থেকে পণ্য নিয়ে ট্রাকে বা গুদামে বোঝাই করে সারা দেশে পৌঁছায়। ব্যবসায়ী নেতারা জানান, গত দু’দিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঘাটে ৫০টির বেশি জাহাজ আটকা পড়েছে। ১২টি ঘাটে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব জাহাজে প্রচুর পণ্য বোঝাই করা রয়েছে। শ্রমিকদের এমন হঠাৎ ধর্মঘটে ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস করতে পারছেন না। কর্ণফুলী নদীর ১৬ ঘাটে প্রতিদিন ২০ হাজারের বেশি টন ভোগ্যপণ্য খালাস হয়। এই অবস্থায় অবরোধ বাড়লে কিংবা পণ্য খালাসে ব্যাঘাত ঘটলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। তবে ধর্মঘট নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। গতকাল শ্রমিক নেতা ইদরিস আলীর সঙ্গে যখন কথা হয় তার পরপরই তিনি গ্রেপ্তার হন। এর আগে এই নেতা বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে ১০০ টাকায় ২০ টাকা শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পুরো বছর পেরিয়ে গেলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।  ঘাট গুদাম শ্রমিক সংগঠনের অন্যতম নেতা রাজা মিয়া বলেন, মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে আমরা আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু কখনওই এর বাস্তবায়ন হয়নি। এবার সব শ্রমিক রাস্তায় নেমেছে। একটি পক্ষ এর বিরোধিতা করছে। তারা টাকা খেয়ে এসব কর্মকা- করছে।  অন্যদিকে ঘাট ঠিকাদার সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, যারা অবরোধ ডেকেছে তারা বহিরাগত। তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে তাদেরকে কেউ চেনে না। আমরাই মূল সংগঠন। আলোচনা ছাড়া এ ধরনের ধর্মঘট কেউ সমর্থন করে না।

No comments

Powered by Blogger.