আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে প্রশ্ন বিএনপির

আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে প্রশ্ন বিএনপির। যুক্তরাজ্যের আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ লর্ডস সভায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। তাদের যুক্তি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক-বাহক পরিচয় দিলেও সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে রেখেছে। ওই সেমিনারে বিএনপি নেতারা সাম্প্রদায়িক জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক সরাসরি অস্বীকার করেন। দুই দল এ সেমিনারে বিদেশীদের সামনেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। বুধবার লন্ডনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
হাউস অব লর্ডসে বাংলাদেশসংক্রান্ত অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্র“প এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন লর্ড এভাবেরি ও অ্যান মেইন। বাংলাদেশ থেকে অংশ্রগ্রহণকারী আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। এছাড়াও সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী ওই সেমিনারে অংশ নেন। এর বাইরে লর্ডস সভার সদস্য ও মানবাধিকার নেতারা বক্তৃতা করেন। সেমিনারের বিষয়ে সোমবার যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম ও বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী। তারানা হালিম জানান, তারা তিনজন তিন বিষয়ে কথা বলেন। এইচটি ইমাম ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন, ড. মসিউর রহমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং তিনি (তারানা) যুদ্ধাপরাধের বিচার ও মানবাধিকার পরিস্থিতি। জানা গেছে, ওই সেমিনারে লর্ড কারলাইল বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে মকারি (তামাশা) হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এর আয়োজকদের শাস্তি হওয়া উচিত। অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট তারানা হালিম এর কড়া জবাব দেন। তিনি এই বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।
তারা মানুষের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি পশুপাখিও। তাই এদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। এসব নির্যাতিত ও নিহতদের স্বজনরা যদি বিচার না পায় তাহলে তা হবে মানবাধিকারের মকারি (তামাশা)।
তারানা হালিম সেমিনারে উপস্থিত আইন পরিষদের সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় বিচার হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক মানের। এখানে আপিল ও রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে। যা নুরেমবার্গ ট্রায়াল এমনকি টোকিও ট্রায়ালেও ছিল না। তাছাড়া যারা মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলছে সেই যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর ৩০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় সেখানকার এক আইন পরিষদ সদস্য নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে দেশে না বসে বিদেশে কথা বলায় কিছুটা ভর্ৎসনা করেন।
সেমিনারে বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গণতান্ত্রিক নয় বলে দাবি করেন। এছাড়া তারা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করে না। সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে রেখেছে। ওই সময় বিএনপির প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় এলে এটি (ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম) বাতিল করবেন কিনা? এর উত্তরে নীরব থাকেন বিএনপি নেতারা বলে জানা গেছে। এদিকে এ সেমিনারে বিএনপি নেতারা জামায়াতের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই বলে জানান। এছাড়া সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ব্যাপারে বলা হয়, তিনি বাঙালি নন।
শমসের মবিন চৌধুরী ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রাখা এবং সেক্যুলারিজম নিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয় স্বীকার করেন। জামায়াত নিয়ে লর্ডস সভার আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের (জামায়াত) সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি সমঝোতা রয়েছে। কোনো আদর্শিক সম্পর্ক নেই। লর্ডস সভার সেমিনারে তারা সেটাই বলেছেন। প্রমোদ মানকিনকে বাঙালি নয় বলে অভিযোগ করার বিষয়ে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, তিনি (মানকিন) নিজেই বলেছেন জাতি হিসেবে বাঙালি না হলেও আমি বাংলাদেশের নাগরিক। অ্যাডভোকেট তারানা হালিম জানান, প্রমোদ মানকিনের বক্তব্য ছিল তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তার মাতৃভাষা বাংলা।
সেমিনারে সংসদ সদস্য তারানা হালিম ২০০১ ও ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণের চিত্র প্রদর্শন করেন। তখন বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে, যেটা তাদের নেই। কারণ তার লাগেজ নিয়ে সমস্যা ছিল। তবে লর্ডস সভার ওই সেমিনারে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের এক সমাবেশে সম্প্রতি এইচটি ইমামের দেয়া বক্তব্য তুলে ধরে সরকারকে অবৈধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন বিএনপি নেতারা। জবাবে উপদেষ্টা এইচটি ইমাম তার বক্তব্যে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপিকে আমন্ত্রণসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলে আদালতের রায়ের উল্লেখ করেন। তিনি রায়ের কপি থেকে পড়েও শোনান।

No comments

Powered by Blogger.