সেই হাসপাতাল বন্ধ ঘটনাস্থলে তদন্ত দল

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক জগ্‌লুল আহ্‌মেদ চৌধূরীর মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক চালক ও বাসটি শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে চালক ও বাসকে শনাক্ত করতে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এ দুর্ঘটনায় ঘটিত তদন্ত কমিটি। বাসচালককে শনাক্ত করতে নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে সাংবাদিক জগ্‌লুল আহমেদ চৌধূরীর চিকিৎসায় অবহেলার কারণে রাজধানীর পান্থপথের মোহনা হাসপাতালের চিকিৎসাসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করে কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি দল মোহনা হাসপাতাল পরিদর্শন করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোশাররফ হোসেন এবং অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে দলটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখতে পায় কোন অনুমোদন ছাড়াই হাসপাতাল চালাচ্ছিল মোহনা কর্তৃপক্ষ। ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর অনুমতি পেলেও হাসপাতালের কার্যক্রম চালানোর কোন লাইসেন্স তারা পরিদর্শক দলকে দেখাতে পারেনি। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের হাসপাতাল বন্ধ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-র সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জগ্‌লুল আহ্‌মেদ চৌধূরী শনিবার রাত ৮টার দিকে রাজধানীর কাওরানবাজার এলাকায় সোনারগাঁও হোটেল মোড়ে বাস থেকে নামার সময় বাসের ধাক্কায় আহত হন। গুরুতর আহত এ সাংবাদিকের রাজধানীর মোহনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তার কোন চিকিৎসা দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রথম বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বললেও পরে তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তারা। ওই হাসপাতাল থেকে জগ্‌লুল আহ্‌মেদকে পাশের কমফোর্ট হাসপাতালে নেয়ার পর ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
তার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এসময় তারা আশপাশের লোকদের সঙ্গে কথা বলেন। আজ এ বিষয়ে বিআরটিএ’র অফিসে কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই কমিটির সদস্য ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত জানিয়েছেন, সভায় এ ঘটনায় করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, একটা যথাযথ প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এতে জগ্‌লুল আহ্‌মেদ চৌধূরীর মৃত্যুর কারণ এবং পরে যাতে একটা প্রাণও এভাবে ঝরে না পড়ে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হবে।
জগ্‌লুল আহ্‌মেদ চৌধুরীর মৃত্যুর পরদিন রোববার পাঁচ সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করেছ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। বিআরটিএ পরিচালক (প্রশাসন) মশিউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন- ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত,  ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ নাহমাদুল হাসান ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর) ট্রাফিক কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুবুর রহমান। তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনে যথাযথ কোন প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব না। তাই তারা এ বিষয়ে আরও সময় চাইবেন।
ঘাতক বাসচালককে শনাক্ত করার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে কাঁঠালবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলসংলগ্ন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু এতে ওই দৃশ্য ধরা পড়েনি। এমনকি অনেকের সঙ্গে কথা বললেও কেউ ওই বাস সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি বলে জানান তিনি। বিশিষ্ট সাংবাদিক জগ্‌লুল আহ্‌মেদ চৌধূরীর মৃত্যুর পরদিন অজ্ঞাত বাসচালককে আসামি করে কাঁঠালবাগান থানায় একটি মামলা করেন তার ছেলে নাবিদ আহমেদ চৌধুরী।

No comments

Powered by Blogger.