আড়াইহাজারে আলীগ-বিএনপি সংঘর্ষ : যুবলীগ কর্মী নিহত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আমজাদ হোসেন (৪৫) নামের এক যুবলীগকর্মী নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও কমপক্ষে ১৫ জন। তাদের গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুই দফা প্রায় ২ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষুুব্ধরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি সমর্থক দুজনের ৫টি বসতঘরে হামলা, ভাংচুর করেছেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেছে। রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত যুবলীগকর্মী আমজাদ উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের পাঁচরুখী এলাকার মৃত ইদ্রিস মোল্লার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানান, ফেস্টুন ভাংচুরকে কেন্দ্র করে উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ সমর্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবু সমর্থিতদের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। রোববার সকাল ৯টার দিকে নজরুল ইসলাম বাবুর ছবি সংবলিত ফেস্টুন ভাংচুর করে বিএনপির কর্মীরা। এনিয়ে সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাচরুখী এলাকায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নজরুল ইসলাম বাবু সমর্থিত যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুবদলের সজীব, দীন ইসলাম, মনির ও তার সহযাগীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল পৌনে ১১টার দিকে আমজাদ হোসেনকে যুবদলকর্মী সজীব, ইকবাল, ফারুকসহ তাদের সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে আমজাদের পায়ে সজীব গুলি করে। এ সময় আমজাদের লাইসেন্স করা পিস্তলটি ছিনিয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। আশপাশের লোকজন আমজাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে উভয় গ্র“পের নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্র, বল্লম, টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দীন ইসলাম, ডা. মনিরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থাও আশংকাজনক। আইউব, বাবু, সাইফুল, তাওহীদ, সোলায়মানসহ বাকিদের রূপগঞ্জের ভুলতা ও পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। সংঘর্ষের সময়ে উভয়পক্ষের ব্যাপক গোলাগুলিতে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যান চলাচল। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এক ঘণ্টা অবরোধ থাকায় দুপুর সাড়ে ১২টায় পুলিশ এসে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমজাদের মৃত্যু হয়। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ ও আমজাদের এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন দুপুর ১টায় ফের সড়ক অবরোধ করে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর এবং ফটিক ও ইকবালের ৫টি বসতঘরে আগুন দেয় বিক্ষুুব্ধরা।
আগুনে পুড়িয়ে দেয়া ঘরের মালিক বিএনপি সমর্থক আবদুর কাদিরের পুত্রবধূ খোদেজা বেগম সাংবাদিকদের জানান, সকালে আওয়ামী লীগ সমর্থক একদল লোক পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর চালায়। একপর্যায়ে তারা পেট্রল ঢেলে তাদের ৫টি বসতঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তারা পাকা ভবনের একটি ঘরে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
ঘটনাস্থলে থাকা আড়াইহাজার উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওই এলাকার মো. বাকির ভূইয়া সাংবাদিকদের জানান, ব্যবসায়িক কারণে আমজাদ হোসেন মোল্লা নারায়ণগঞ্জের জামতলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। মাঝেমধ্যে তার পৈতৃক বাড়ি পাঁচরুখী এলাকায় আসেন। রোববারও সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি পাঁচরুখী বাজার থেকে মহাসড়কে উঠার সময় নজরুল ইসলাম আজাদের সমর্থক ইকবাল, রুহুল আমিন, চাক্কু মামুনসহ ১০-১২ জন তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে খুনের মামলার আসামি সজীব তার পায়ে গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে পালিয়ে যায়। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানেই আমজাদ হোসেন মারা যান। নিহত আমজাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জুয়েল আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপির ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার কারণেই এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। আমজাদের পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়লে এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলায় শান্তি বিনষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সর্বশেষ নিরীহ ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করল। দীন ইসলাম, মনিরসহ আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের অতর্কিত গুলি ও দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে তারা। নিহত আমজাদ যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে তিনি জানান।
ঘটনার পরপরই নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার, ইউএনও মোহাম্মদ সামছুল হক, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ শরিফুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশের পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালে আনা হলে ডাক্তার আমজাদকে মৃত ঘোষণা করেন। তার গায়ে গুলি ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। দোষীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করেনি।

No comments

Powered by Blogger.