সচিব শওকতের ৩ মামলা পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত

প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিন মামলার পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। রোববার কমিশন বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নামে-বেনামে একাধিক প্লট গ্রহণের অভিযোগে দায়েরকৃত তিন মামলা থেকে ড. খোন্দকার শওকত হোসেনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা। সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে চার্জশিট দাখিলের পক্ষে মত দেন এক কমিশনার। তিন সদস্যের কমিশনে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলে অপর দুই কমিশনারের মতামতের অপেক্ষায় ঝুলেছিল সচিব শওকতের মামলার বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত। রোববার আরেক কমিশনার মতামত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি এবং অপর কমিশনার শওকত হোসেনের মামলাগুলোর পুনঃতদন্ত করার পক্ষে মত দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ যুগান্তরকে রোববার বলেন, খন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র মতে, নামে-বেনামে একাধিক প্লট গ্রহণ এবং বেআইনিভাবে সবগুলো প্লটের আয়তন বৃদ্ধির অভিযোগে প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে চলতি বছর ২২ এপ্রিল ৩টি মামলা দায়ের করে দুদক। পরিচালক হিসেবে অবসরে যাওয়া উপপরিচালক যতন কুমার রায় মামলাগুলোর তদন্ত করেন। ৬ মাসের বেশি তদন্ত শেষে ৯ নভেম্বর ড. খোন্দকার শওকত হোসেনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিলের অনুমতি চান তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও মামলা রুজুর আগে দুদকের একই কর্মকর্তা সুপারিশে বলেন, সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন নামে-বেনামে একাধিক প্লট গ্রহণ, একাধিকবার আকার বৃদ্ধি রাজউক বিধি ‘দ্য টাউন ইমপ্র“ভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫৩’ ও ‘দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (অ্যালোটমেন্ট অব ল্যান্ড) রুলস-১৯৬৯’পরিপন্থী। রাজধানীর ইন্দিরা রোডে নিজের মালিকানায় অ্যাপার্টমেন্ট থাকা সত্ত্বেও নিজ নামে উত্তরায় রাজউকের প্লট নিয়েছেন। আকার পরিবর্তন করেছেন। মা জাকিয়া আমজাদের নামে উত্তরা সম্প্রসারিত প্রকল্পে প্লট নিয়েছেন ও পরে আকার বৃদ্ধির মাধ্যমে বিক্রি করেছেন। স্ত্রী আয়েশা খানমের নামে পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নিয়ে দুই দফা আকার বৃদ্ধি করেছেন, যা ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা, দণ্ডবিধির ৪৭৭(ক)/১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
৯ নভেম্বর দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে এ কর্মকর্তা বলেন, রাজউক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিতে যেসব শর্ত ছিল, খোন্দকার শওকত তার সবগুলোই পূরণ করেছেন। রাজউক এলাকায় নিজ অথবা পোষ্যের নামে প্লট-ফ্ল্যাট থাকলে তিনি আবেদন করতে পারবেন না- মর্মে যে শর্ত ছিল সেটিও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ স্বামীর নামে ফ্ল্যাট থাকলে স্ত্রী প্লটের জন্য আবেদন করলে এবং দুজনেরই পৃথক টিআইএন থাকলে কী হবে- রাজউকের বিজ্ঞপ্তিতে সেটি স্পষ্ট নয়। আরও বলা হয়, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শওকত ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজউক প্রকল্পে স্ত্রী ও মায়ের নামে একাধিক প্লট গ্রহণ করেছেন- এ অভিযোগও প্রমাণিত নয়। কারণ তার চেয়েও প্রভাবশালী ১২০ বিশিষ্ট ব্যক্তি একই কায়দায় একাধিক প্লট গ্রহণ করেছেন। ফলে এ প্রেক্ষাপটে অভিযোগ আনতে গেলে আরও অনেককেই ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযুক্ত করতে হবে। ফলে বিচারে মামলার অভিযোগ প্রমাণ করা জটিল হয়ে পড়বে।
এদিকে অনুসন্ধান এবং তদন্ত প্রতিবেদনে একই কর্মকর্তার বিপরীত অবস্থানের ফলে ডাকসাইটে আমলা ড. খোন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উচ্চ মহলের চাপ ও প্রলোভনেই তদন্তের গতি ও দিক পরিবর্তন হয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.