বাসচাপায় ছাত্র নিহত অগ্নিগর্ভ ইবি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গাড়িচাপায় টিটু নামে এক ছাত্র নিহত হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশ ছাত্রদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।  উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেলা তিনটার দিকে এক জরুরি বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। অপরদিকে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বিচারে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ। সূত্র জানায়, গতকাল বেলা বারটার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র তৌহিদুর রহমান টিটু ক্যাম্পাসের ঝিনাইদহগামী একটি বাসে ওঠে। পরে ওই বাস থেকে নামার সময় পেছন থেকে দ্রুতগামী ‘সাগর’ নামে একটি বাস তাকে চাপা দেয়। গাড়ির চাপায় তার গলা ছিঁড়ে যায়। পরে পুরো ক্যাম্পাসে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সব শিক্ষার্থী এসে বিক্ষোভে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহতায় রূপ নেয়। এ সময় তারা মেইন গেটের পাশে থাকা ক্যাম্পাসের ভাড়া করা সব বাসে আগুন দেয়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় বাসগুলো। পরে তারা মেডিক্যাল ভবনের পাশে বাসস্ট্যান্ডে থাকা বাসগুলোতেও আগুন দেয়। ফলে ক্যাম্পাসের ভাড়া করা প্রায় ৩০টি বাস পুড়ে যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাংলোর ভেতরে ঢুকে কিছু বাস অক্ষত থাকে। এক পর্যায়ে তারা ক্যাম্পাসের প্রশাসন ভবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবন, অনুষদ ভবন, আইন অনুষদ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন, টিএসসিসহ প্রায় সব ভবনে ভাঙচুর চালায়। পরে তারা লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পৌনে দু’টার দিকে শিক্ষার্থীরা আবারও ভাঙচুরের চেষ্টা চালালে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। পুলিশ এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে  আনার চেষ্টা চালালে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিকে গুলি, রাবার বুলেট, লাঠিচার্জ চালালে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বেলা তিনটার দিকে এক জরুরি বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা করে। নিহত টিটুর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে বলে জানা গেছে। বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক বলেন, টিটু আমার খুব প্রিয় ও মেধাবী ছাত্র ছিল। সে এভাবে আমাদের কাঁদিয়ে চলে যাবে কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। তার মৃত্যুতে আমরা বাকরুদ্ধ। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের ভাড়া করা প্রায় প্রত্যেক বাসের চালকসহ হেলপাররা খুবই রূঢ় স্বভাবের। তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাউকেও পাত্তা দেয় না। ক্যাম্পাস সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য নিজস্ব বাসের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. লোকমান হাকিম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চেষ্টা করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি বৈঠকে এক সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে  গতকাল সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সকল ছাত্রকে এবং আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জনালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি  প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার। এদিকে, বাস দুর্ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহতের ঘটনায় নির্বিচারে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ। গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটায় কুষ্টিয়া মজমপুর গেইটে সমিতির নেতৃবৃন্দ অবস্থান নিয়ে সব রুটে চলাচলকারী বড় বাস, মিনিবাস, ট্রাক, ট্যাঙ্কলরিসহ সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে জেলার বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি সিহাব উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বাস দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনায় ছাত্ররা নির্বিচারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ভাড়া করা  ৩০টি মালিকানাধীন বাসে অগ্নিসংযোগ করায় সেগুলো  পুড়ে সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া জেলার বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা ধর্মঘট আজ বিকেল পর্যন্ত স্থগিত করেছে।
বন্ধ ঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ থাকলেও পরিবহন সমস্যায়। পরে শিক্ষার্থীরা আবারও ফুঁসে উঠেছে। তারা বিকাল চারটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে মিলিত হয়েছে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি উত্তরণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হয়েছে।
ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার জানিয়েছেন, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান টিটু ক্যাম্পাসে বাস দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনকে প্রধান করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এবং আগামী ২১ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.