ছাত্র নিহত হওয়ার জেরে বিক্ষোভ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ

(ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা বাসের চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত হন। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বাসগুলোতে ভাঙচুর চালান ও আগুন দেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ছবি: তৌহিদী হাসান) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা বাসের চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বাসগুলোতে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়। সার্বিক ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। নিহত ওই ছাত্রের নাম তৌহিদুর রহমান টিটু। তিনি বায়োটেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খালিশপুর গ্রামে।
তৌহিদুরের সহপাঠীরা জানান, আজ রোববার একটি কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষা শেষে টিটুসহ তাঁরা দুপুর ১২টার গাড়ি ধরার জন্য ডায়না চত্বরে এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় টিটু একটি গাড়ি থেকে আরেকটি গাড়িতে উঠতে গেলে পেছন থেকে আসা একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দেয়। তাঁরা আরও জানান, টিটুকে যে গাড়ি ধাক্কা দেয় ওই গাড়িটি সামনের একটি গাড়িকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক মামুনুর রহমান জানান, তৌহিদুরের মৃত্যুর সংবাদ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা ৩৪টি গাড়িতে আগুন দেন। ভাঙচুর করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িসহ নয়টি গাড়ি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এ সময় শিক্ষার্থীরা গাড়িচালকের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসে শেষ হয় এবং সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রশাসনের কেউই ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ত ম লোকমান হাকিম বলেন, ‘ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় আমি সেখান থেকে প্রশাসন ভবনে চলে আসি। আসলে তখন আমার কিছুই করার ছিল না।’
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বলেন, ‘আমাদের এক সহপাঠী গাড়িচাপায় মারা গেলে আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। চালকের শাস্তির দাবিসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে আবাসিকীকরণের দাবি জানিয়েছি। আমাদের অনেক শিক্ষার্থীই ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউই আমাদের সঙ্গে কোনো কথাও বলেননি অথচ পুলিশকে লেলিয়ে দিয়ে আমাদের উপর কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়েছে। আমাদের সহপাঠীদের ধরে ধরে মারধর করেছে।’
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় চিসিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে এবং অনেকটা আত্মরক্ষার্থে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। তবে তিনি রাবার বুলেট ছোড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সংঘর্ষে আহত ২৫
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সজল নামের একজনের পা ভেঙে গেছে। তাঁকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ দাবি করছে, সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেলের আঘাতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ
বেলা সাড়ে তিনটায় এক জরুরি বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। আবাসিক হলগুলোকে আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের প্রতিবাদে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এ বছর নির্ধারিত সময়ের শীতকালীন ছুটি বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন ভবন থেকে আমাদের বের হবার মতো কোনো অবস্থা না থাকায় আমরা প্রশাসনের কেউই ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতেই মূলত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমাদের বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্রের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে লাশ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে, বাড়ির লোকজন লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছেন।’
তদন্ত কমিটি গঠন
এ ঘটনায় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন কামালউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সদস্যরা হলেন: ইকবাল হোছাইন, রুহুল কে এম সালেহ, মাহবুবুল আরফিন, আবদুস শহীদ মিয়া, উপ-রেজিস্ট্রার আবদুল লতিফ। কমিটিকে আগামী ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.