পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে হানাদারদের

আজ ১ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাস শুরু। ১৯৭১ সালে এ মাসের ১৬ তারিখে শত্র“মুক্ত হয় দেশ। অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজের স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। বিজয় ছিল আনন্দ, উল্লাস ও গৌরবের। সঙ্গে আপনজনকে হারানোর বেদনা ও কান্না। তবে বিজয়ের ৪৩ বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে। যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সামনে ঝুলছে এখন অপকর্মের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এখন পর্যন্ত একজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আরেকজনের চূড়ান্ত রায় দেয়া হয়েছে। সেটি এখন কার্যকরের অপেক্ষায়। দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন উদ্দীপনায় জাগ্রত দেশপ্রেম, গণতান্ত্রিক চেতনা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাঙালির সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে একের পর এক পরাজয়ে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে পাক হানাদারদের। তার ওপর ভারতীয় মিত্র বাহিনীর শাণিত আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা। পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন শুধু সময়ের ব্যাপার। পরাজয়ের বিষয়টি বুঝতে পেরে নতুন কূটকৌশল শুরু করে তারা। তবে সম্মুখ যুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক কৌশলেও হারতে থাকে পাকিস্তান।
বাঙালির জন্মভূমি শত্রুমুক্ত করার লড়াইকে আড়ালে রাখতে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে বেতারে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে তারা মরণপণ লড়াই চালিয়ে যান। একদিকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ যুদ্ধ, অন্যদিকে মিত্র বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণ। প্রাণ বাঁচাতে পাক হানাদাররা বীর বাঙালির কছে আত্মসমর্পণের পথ খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে বাংলাদেশ দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে এগিয়ে যায়। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথ বেয়ে আসে পরম কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।
মাসব্যাপী উৎসাহ-উদ্দীপনায় এবং নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিজয়ের ৪৩ বছর উদ্যাপন করবে এ দেশের মানুষ। প্রতিদিনই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করবে এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করবে। ঘৃণা ও ধিক্কার জানাবে স্বাধীনতার শত্রু এদেশীয় রাজাকার, আলবদর ও মানবতার শত্র“ যুদ্ধাপরাধীদের।
সারা দেশে কর্মসূচি : মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি বাস্তবায়ন ও মুক্তিযোদ্ধা দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটি নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- সব জেলা-উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতদের সমবেত করে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের বাসভবনে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়, সমাবেশ-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা তুলে ধরা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের জন্য প্রার্থনা ইত্যাদি। জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি : এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি বাস্তবায়ন ও মুক্তিযোদ্ধা দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৭টায় মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল সাড়ে ৯টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের জমায়েত এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তন অভিমুখে বিজয় শোভাযাত্রা পালন করা হবে। এসব কর্মসূচিতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) কেএম শফিউল্লাহ বীর উত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) সিআর দত্ত, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত প্রমুখ অংশ নেবেন।
আরও কর্মসূচি : এদিকে বিজয়ের মাসকে সামনে রেখে রোববার দিবাগত রাতে সম্মিলিত আওয়ামী সমর্থক জোট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ-মানববন্ধন, মোমবাতি প্রজ্বলন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালন করে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী যোগদান করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল চত্বরে আজ বিকালে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত ভাস্কর্য ‘জয় বাংলা’ উম্মোচন করা হবে। ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন সকাল ৭টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবে। এ ছাড়া বিকালে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিজয় র‌্যালি বের করবে। র‌্যালি উদ্বোধন করবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

No comments

Powered by Blogger.