দ্বিগুণেরও বেশি বেতন বাড়ানোর সুপারিশ- ১৪ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দেবে জাতীয় চাকরি ও বেতন কমিশন

বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি করার সুপারিশ করছে জাতীয় চাকরি ও বেতন কমিশন। আর ধাপ (গ্রেড) করা হচ্ছে ১৬টি। বর্তমান ধাপ ২০টি। কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সর্বোচ্চ ধাপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের বেতন সুপারিশ করা হচ্ছে নির্ধারিত এক লাখ টাকা। বর্তমানে তাঁরা বেতন পান নির্ধারিত ৪৫ হাজার টাকা। আর সর্বনিম্ন ধাপের মূল বেতনের সুপারিশ করা হচ্ছে আট হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে তা চার হাজার ১০০ টাকা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বেতনকাঠামোর সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন ১৪ ডিসেম্বর রোববার সকালে জমা দেবেন কমিশন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
জানতে চাইলে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দেওয়া অর্থাৎ আগামী রোববারের আগে বেতনকাঠামো নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
কমিশন সূত্র জানায়, সিনিয়র সচিবদের জন্য বেতনের সুপারিশ করা হচ্ছে ৯০ হাজার টাকা। আর সচিবদের জন্য করা হচ্ছে ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে সিনিয়র সচিবেরা নির্ধারিত ৪২ হাজার ও সচিবেরা ৪০ হাজার টাকা করে বেতন পান।
সূত্রমতে, দ্বিতীয় ধাপের (গ্রেড-২) বেতনের সুপারিশ করা হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে এই ধাপের মূল বেতন ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর তৃতীয় ধাপের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে এই ধাপের মূল বেতন ২৯ হাজার টাকা।
বর্তমানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা নবম ধাপে বেতন পেয়ে থাকেন। তাঁদের বর্তমান মূল বেতন ১১ হাজার টাকা। নতুন কাঠামোতে তাঁদের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের এ কমিশন গঠিত হয় গত বছরের ২৪ নভেম্বর, যার মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ডিসেম্বর।
বেতন বৃদ্ধির জন্য অন্যবার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সুপারিশ থাকলেও এবারই সুপারিশ করা হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, আগের সব বারই চারজন সদস্যের পরিবার ধরে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হতো। নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ তৈরির ক্ষেত্রে বাবা-মাসহ ছয় জনের একটি পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন বেতন কাঠামোর আওতায় আসবেন। জানা গেছে, বেতন কাঠামোর সুপারিশ তৈরিতে সরকারের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় রেখেছে কমিশন।
কমিশন সূত্র জানায়, এবারই প্রথম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিমা পলিসির আওতায় আসছে। তাঁদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিমা এবং জীবনবিমা ও দুর্ঘটনাজনিত অক্ষমতা বিমা। পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্লট ও স্বল্পসুদে ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনা এবং সব ধরনের ভাতাও যৌক্তিকীকরণের কথা থাকছে কমিশনের সুপারিশে। কমিশনের মতে, অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবতার সঙ্গে এগুলোর পরিমাণের মিল নেই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অবসর সুবিধা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, প্রেষণ, মহার্ঘ্, উৎসব ও শ্রান্তি বিনোদন, ধোলাই ভাতা, টেলিফোন, গাড়ি ও মোবাইল ফোনবিষয়ক আর্থিক সুবিধা এবং রেশন সুবিধা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত দুই মাসে কয়েক বারই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্য আলাদা বেতন-কাঠামো করার একটি প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েও পরে আর হয়নি। বেতন কমিশন সূত্র জানায়, নতুন বেতন কাঠামোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোও অন্তর্ভুক্ত। সে হিসেবে তাদের জন্য আলাদা কাঠামো করার কোনো সম্ভাবনা নেই। সুপারিশ বাস্তবায়নে কত টাকার দরকার পড়বে—সে ব্যাপারে একটি হিসাব করা হলেও কমিশনের কেউই তা নিয়ে কথা বলতে চাননি।
যোগাযোগ করলে অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কত টাকার দরকার পড়বে আমরা এখনো জানি না। তবে বেতন কমিশনের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রের আয় ও সম্পদের সঙ্গে মিলিয়ে বিবেচনা করা হবে তা কতটুকু বাস্তবায়ন করা যায়। বিষয়টি নিয়ে পরে কাজ করবে অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ।’
উল্লেখ্য, অতীতেও কমিশনের সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি সরকার।

No comments

Powered by Blogger.