চট্টগ্রামে ইস্ত্রি দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা by মহিউদ্দীন জুয়েল

পছন্দের শাড়ি না পরায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল স্বামী হারুন। তাই আপত্তি জানিয়ে তা বদলে ফেলার কথা জানায় স্ত্রীকে। কিন্তু স্ত্রী ইমি আক্তার নাছোড়বান্দা। সে শাড়ি কিছুতেই খুলবে না। এ নিয়ে শুরু হয় কথাকাটাকাটি। মান-অভিমান থেকে এক পর্যায়ে তা চলে যায় বড় ধরনের ঝগড়ায়। শেষমেশ উত্তেজিত হয়ে হারুন হাতের কাছে থাকা ইস্ত্রি দিয়ে আঘাত করে স্ত্রীর মাথায়। মুহূর্তেই মারা যায় ইমি। চট্টগ্রামে বিয়ের ৪ মাস পর খুনসুটি থেকে এভাবেই রাগের বশে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিল স্বামী হারুন। গতকাল সকালে নগরীর হালিশহরের মইন্যাপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, কিভাবে ভালবাসার স্ত্রীকে নিজ হাতে খুন করেছে। তবে এ ঘটনার জন্য বারবারই সে নিজেকে দোষী বলে স্বীকার করে। ঘটনার বিবরণ দিয়ে ঘাতক হারুন বলেন, আমি মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করি। ৪ মাস আগে ইমি আক্তারকে বিয়ে করি। বিয়ের এক মাস পর থেকে তার সঙ্গে আমার ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হয়। সে যা খেতে চাইতো না, আমি তা খেতাম। টিভির সাউন্ড নিয়ে খুনসুটি হতো। রাতে ঘুমানোর সময়ও নানা ঝামেলা হতো। তার সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দিতে শুরু করে তারও কয়েক দিন পর। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে যা ঘটে গেল তা বিশ্বাস করতে পারছি না। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি নিজের হাতে বউকে খুন করেছি। ভাবতে পারছি না। হালিশহর থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঘাতক স্বামী হারুন আরও বলে, আগের রাতে পরিকল্পনা ছিল দু’জনে সকালে খুব সুন্দরভাবে সেজেগুজে বের হবো। এরপর কয়েকজন আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যাবো। সেখান থেকে কিছু জরুরি কাজ সারবো। সকাল ৮টায় সকালের নাশতা সেরে আমি জামাকাপড় পরে রেডি হয়ে যাই। পরে দেখি ইমি যে পোশাক পরেছে তা আমার কাছে সুন্দর লাগছে না। তাকে আমি শাড়ি পরতে বলি। সে বলে পরবে না, যা পরেছে তাই নাকি ভাল। আমি কথাকাটাকাটি থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কিভাবে যেন তা জেদের বশে রূপ নেয়। একসময় হাতের কাছে থাকা কাপড় সোজা করার ইস্ত্রি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করি। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি আঘাতটা তার মৃত্যুর কারণ হবে। ইমি আঘাত পেয়ে ‘মা গো’ বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমি বেশ কয়েকবার পানি ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করি। একসময় দেখি সে আর কথা বলছে না। এতে ভয়ে কাঁপতে থাকি। আশপাশের প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার পরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেল ঘাতক হারুন পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিবেশীরা তাকে একটি ঘরের ভেতর দরজাবন্ধ করে দিয়ে আটকে রাখে। এরপর হালিশহর থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। তারা এসে হারুনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান করা হবে বলে জানান এক এসআই।
হালিশহর থানা পুলিশ জানায়, গুরুতর আহত অবস্থায় তারা ইমি’র লাশ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। ঘাতক হারুন তাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। সে চাকরি সূত্রে মধ্যপ্রাচ্যে থাকে। দেশে ফিরে চার মাস আগে ইমিকে বিয়ে করে বলে তারা জানতে পেরেছে।
নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার এসএম তানভির আরাফাত মানবজমিনকে বলেন, ঘটনা সত্যি। হারুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সে বলেছে রাগের বশে নাকি স্ত্রীকে খুন করেছে। যতটুকু জানতে পেরেছি বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। তবে ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। কেউ কেউ বলছেন, এক আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াত শেষ করে আসার পর তাদের মধ্যে কলহ দেখা দেয়। অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, সকালে শাড়ি পরা নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়ার কথা তারা শুনেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য ইমি’র লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
হালিশহর থানার ওসি আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির জানান, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে তারা এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হারুন হাতের কাছে থাকা ইস্ত্রি দিয়ে ইমি’র মাথায় আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই হারুনের পিতা আবুল কামলা মিস্ত্রি (৮৩) ও মা আঞ্জুমান আরা বেগম (৭০)-কে আটক করা হয়। পরে বিকালের দিকে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.