কোন নারী নিরক্ষর থাকবে না -রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

কোন নারী নিরক্ষর থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মেয়েদের সমান সুযোগ দিতে না পারলে সমাজের উন্নয়ন হবে না। প্রতিটি নারীর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, কোন মেয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে না-এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশে থাকবে না। গতকাল রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বেগম  রোকেয়া পদক-২০১৪’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। নারী শিক্ষা বিস্তার, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারী উন্নয়নসহ অসহায় ও দরিদ্র নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী চলতি বছরের রোকেয়া পদক তুলে দেন অধ্যাপক মমতাজ বেগম ও গোলাপ বানুর হাতে। তাদের প্রত্যেককেই একটি করে স্বর্ণপদক, সনদ এবং এক লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে। বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতিতে ১৯৯৫ সাল থেকে এই পদক প্রবর্তন করে বাংলাদেশ সরকার। প্রতিবছর ৯ই ডিসেম্বর রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে এই পদক বিতরণ করা হয়। প্রথম বছর বেগম শামসুন্নাহার মাহমুদ এই পদক পান। পরের বছর দেয়া হয় কবি সুফিয়া কামাল ও নীলিমা ইব্রাহিমকে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ৩৭ জনকে সরকার এই পদক দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করে বলেন, তিনি অবরোধ ভেঙে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন বলেই আমরা এই জায়গায় আসতে  পেরেছি। তিনি যদি না থাকতেন, আমাদের শিক্ষার পথ না দেখাতেন তাহলে আমরা এতদূর এগিয়ে যেতে পারতাম না। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এই অঞ্চলে মুসলিম পরিবারের মেয়েদের অবস্থার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সে সমাজে মেয়েদের নিচু চোখে দেখা হতো। সেখানে তিনি বিপ্লব করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের মুসলিম মেয়েদের অনেক বাধা ছিল। নারী-পুরুষের সমান অধিকারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সমাজের নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকা একান্ত প্রয়োজন। সমাজের অর্ধেক শিক্ষিত না হলে, সমাজ এগোবে না। বেগম রোকেয়া তার মতিচুর গ্রন্থে বলেছিলেন, আমরা সমাজেরই অর্ধাঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোন ব্যক্তির এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষদের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে-একই। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা, আমাদের লক্ষ্যও তাহাই। রোকেয়ার এই লাইনগুলো উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নারীস্থানের স্বপ্ন দেখতেন। আমরা তার নারীস্থানের স্বপ্ন অনেকাংশে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকারের পাশাপাশি বিচারপতি থেকে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা চাই, প্রত্যেকটা নারী সমান সুযোগ পাবে। অবহেলিত নারী সমাজকে অশিক্ষার অভিশাপ হতে মুক্ত করতে বেগম রোকেয়ার ‘সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি মেয়েদের শিক্ষার কথা বলতেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সচিব তারিক-উল-ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.