‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের সরাসরি প্রতিকার করতে পারে না কমিশন’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সতর্ক হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। গতকাল মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গুমের ঘটনাগুলোতে মানবাধিকার কমিশন তাৎক্ষণিক অভিযোগ গ্রহণ করেছে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এসব বিষয়ে কমিশন যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। সব কাজ দৃশ্যমান নয়। কমিশন অনেক কাজ অন্তরালে থেকে করেছে। এটা কমিশনের দায়িত্ব থেকেই করা হয়েছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কমিশনের এ ভূমিকায় বর্তমানে গুমের ঘটনা হ্রাস পেয়েছে দাবি করে ড. মিজান বলেন, গুম হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য নেই কমিশনের কাছে। পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল মনিটরিং করে গুমের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কমিশন। ২০১৩ সালের পরে কমিশনের জোরালো ভূমিকার কারণে মিডিয়ায় গুমের ঘটনা সেভাবে দেখা যায়নি। মানবাধিকার রক্ষায় কমিশন কোনপ্রকার কার্পণ্য করেনি দাবি করে তিনি বলেন, কমিশনের সফলতা বিচার করতে হবে এর সক্ষমতা দিয়ে। গত কয়েক বছরে আমরা যতটুকু কাজ করেছি তা দায়িত্ববোধ থেকেই। অনেক সময় অনেক ঘটনার অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। কিন্তু মিডিয়ায় ঘটনা সম্পর্কে অবগত স্বপ্রণোদিত হয়ে আমরা সেসব ঘটনায় ভূমিকা রেখেছি। মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশন সরাসরি প্রতিকার করতে পারে না। শুধুমাত্র ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারে। এছাড়া ব্যক্তির মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশন ভূমিকা পালন করে। এ পর্যন্ত যে সব  অভিযোগ আমরা পেয়েছি তার বেশির ভাগ নিষ্পত্তি করেছি। সাধারণ মানুষের জন্য একটি আস্থার জায়গা সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছে কমিশন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে মাঝে মধ্যে গুলিয়ে ফেলি। এটা ঠিক নয়, এতে রাষ্ট্রের প্রতি অবিচার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইন্ডিকেটর। একটা ঘটনার ভিকটিম পরে রাষ্ট্রের কাছে প্রতিকার পাচ্ছে কিনা সেটি তা দেখার বিষয়।
ন্যায়বিচার পেতে দীর্ঘসূত্রতাও মানবাধিকার লঙ্ঘন। মানবাধিকার রক্ষার বাইরেও কমিশন কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে ড. মিজান বলেন, মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি আমরা মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের অধিকার রক্ষায় সরকারকে উদ্বুব্ধ করে যাচ্ছি। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতেও আমরা সচেষ্ট। মানবাধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ সৃষ্টি করে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের কর্মসূচি পালন করতো না। তাদের উচিত এসব কর্মসূচি থেকে সরে আসা। প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, আর্থিক কারণে কমিশনের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয় না। সবার সঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা এখনও তৈরি হয়নি। সরজমিনে কোন বিষয় তদন্তের জন্য যে সহায়তা দরকার তা কমিশন এখনও অর্জন করতে পারেনি। কমিশনের আইনজীবী প্যানেল তৈরির কথা থাকলেও আমরা তা পারিনি।

No comments

Powered by Blogger.