উত্তরপাড়ার ফুলমতি by তোফায়েল হোসেন জাকির

নির্যাতনের স্মৃতি তাড়িয়ে ফেরে এখনও ফুলমতি রানীকে। হাজারো চেষ্টা করেও তিনি ভুলতে পারে না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর নির্যাতন আজও তাকে দংশন করে। তিনি আজও ভোলেননি হানাদারদের নিষ্ঠুরতা বর্বরতা। অথচ স্বধীনতার ৪৩ বছরেও তার ভাগ্যে জোটেনি মুক্তিযুদ্ধের সেই অবদানের স্বীকৃতি। ফুলমতি বলেন, জুটবে কেন? আমরা যে নিচু জাতের মানুষ। ভদ্রভাষায় যাকে বলে হরিজন। সোজাকথা মুচি। বংশানুক্রমে জুতা সেলাই বা মেরামত করাই আমাদের কাজ। সেই ঘরে জন্ম নেয়াই হয়েছে আমাদের কাল। যত বড় অবদানই থাকুক না কেন তার স্বীকৃতী আমরা পাইনি, পাবো না। সাদুল্যাপুর উপজেলা শহরের উত্তরপাড়ার ভূমি অফিসের পূর্বপাশে রাস্তার ধারে খাস জমিতে ফুলমতি রানীর বাড়ি। বাড়ি তো নয়, কয়েকটি টিন আর বাঁশ-ছন দিয়ে গড়া ঝুপড়ি ঘর। তার স্বামীর নাম ফসিরাম রবিদাস। নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে আজ তিনি সর্বহারা। ’৭১-এর নির্যাতনের ক্ষত বুকে নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে না খেয়ে এখনও বেচেঁ আছেন এই বীরাঙ্গনা। এখন কেউ আর তার খোঁজ রাখে না। ফুলমতি রানী জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একদিন স্থানীয় এক বিহারির সঙ্গে হানাদার বাহিনীর কয়েকজন সেনা বাড়িতে এসে তাকে অন্যত্র নিয়ে যায়। ’৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে এভাবে কয়েকবার হায়েনাদের লালসার শিকার হয়েছিলেন ফুলমতি রানী। ৪ ছেলে ১ মেয়ের জননী ফুলমতি বলেন, ১৯৮৮ সালে স্বমী মারা যাওয়ার পর থেকে অতিকষ্টে জীবনযাপন করে আসছি। ছেলেদের সংসারে বাড়তি বোঝা হয়ে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। আজ পর্যন্ত বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পাননি।

No comments

Powered by Blogger.