চট্টগ্রামে চলছে নিয়োগ বাণিজ্য by মহিউদ্দীন জুয়েল

চট্টগ্রামে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। নগর নেতারা ব্যস্ত বিলবোর্ড নিয়ন্ত্রণে। মাসে আয় কোটি টাকা। আর ইউনিভার্সিটিতে চলছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। সেখানে ভিসির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিদিনই হচ্ছে মারামারি। রোজ রাতে গুলি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি জানার পর সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু তারপরও সমস্যার কোন সুরাহা হয়নি। চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি পুলিশ কমিশনারের উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়। এসব বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাতের আঁধারে যত্রতত্র বিলবোর্ড দখল করে এক শ্রেণীর ছাত্রলীগকর্মী তা ভাড়া দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে। এসব টাকার কোনটিই সিটি করপোরেশনের কোষাগারে জমা হচ্ছে না। নগরীর বিভিন্ন কলেজের উঠতি নেতারা এসব বিলবোর্ডের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। তারা প্রতি মাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে আয় করছে কোটি টাকার বেশি। এই মুহূর্ত চট্টগ্রাম শহরে বিলবোর্ডের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্রলীগের ৬টি সিন্ডিকেট। পুলিশের খাতায় যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, সদস্য সনৎ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন, ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ওয়াসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আরশাদুল আলম, নগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৌমেন বড়ুয়াসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের এসব বিলবোর্ড ব্যবসায় বাধা দিতে গিয়ে অতীতে ম্যাজিস্ট্রেটকেও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে বহুবার। গত বছরের ১২ই জুন জিইসি মোড়ে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের সময় এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত হন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন। চট্টগ্রাম পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে তারা জানতে পেরেছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক সদস্যই এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। শহরে বৈধ বিলবোর্ড রয়েছে ৩৯৬৪টি, বিভিন্ন সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ২০৯৪টি আর অবৈধ আছে ৩১২টি। এর বেশির ভাগই ছাত্রলীগের। পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল মানবজমিনকে বলেন, কে কোন দলের তা আমাদের কাছে বড় বিষয় নয়। অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হলো। নগরকে ঢেলে সাজাতে মাঠে নেমেছে পুলিশ প্রশাসন। ইতিমধ্যে আমরা নামে বেনামে লাগানো অসংখ্য ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছি। কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত তার একটা তালিকাও তৈরি করেছি। আশা করছি অনুমোদনহীন বিলবোর্ডের সংখ্যা অনেক কমে আসবে। এদিকে নগর নেতাদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও বেপরোয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে প্রতিদিনই ঘটছে মারামারির ঘটনা। রোজ রাতে শোনা যাচ্ছে গুলির আওয়াজ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভিসি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সম্প্রতি ছাত্রলীগের একটি পক্ষ ভিসির নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নগরীর প্রেস ক্লাবে। আবাসিক হল দখল নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলকালাম কা- ঘটে গেছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। কেবল ছাত্রলীগের মারামারির কারণেই ৮ মাসের সেশনজটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ভিসি পুলিশ চালাচ্ছেন পুরো ইউনিভার্সিটির শিক্ষাকার্যক্রমে। এতে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন অভিভাবকরা। তারা অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর ভয় দূর করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ভিসির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ‘ছাত্রলীগ’। প্রতিদিনই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটছে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ধাওয়া করতে ব্যবহার করছে ভয়ঙ্কর অস্ত্র। বিশেষ করে দা, ছুরি, পিস্তল আর রামদা থাকছে ছাত্রলীগের সঙ্গী হয়ে।

No comments

Powered by Blogger.