বিদ্যুৎ সহযোগিতা চুক্তির সম্ভাবনা

সার্ক বিদ্যুৎ সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যদিও পাকিস্তানের আপত্তির কারণে আরও দুই চুক্তির সঙ্গে এই চুক্তিও অনিশ্চিত বলে রোববার সন্ধ্যায় জানানো হয়েছিল সার্ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ৪১তম বৈঠকের প্রথম দিন শেষে। কিন্তু সোমবার দ্বিতীয় দিনের বৈঠক শুরুর পর এই চুক্তি হতে পারে বলে আশার বাণী শোনান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। এদিকে আগামীকাল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হচ্ছে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।’ তার আগে আজ সার্কভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স বৈঠকে বসবেন।
সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ কাঠমান্ডু যাচ্ছেন। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে বিকাল ৩টায় তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
গতকাল পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক) নাফিস জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুৎ সহযোগিতা চুক্তি বিষয়ে আমাদের সামান্য আপত্তি ছিল। আমরা সহজ কিছু শর্ত তুলে ধরেছিলাম। সেগুলোর সমাধান হচ্ছে। এ চুক্তি হতে পারে।’ এ চুক্তির আওতায় সার্কভুক্ত দেশগুলো বিদ্যুৎ বিষয়ে যে কোনো সহযোগিতা ও আলোচনার সুযোগ পাবে। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য সার্ক আঞ্চলিক রেল সহযোগিতা চুক্তি এবং সার্ক পণ্য ও যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচল বিষয়ক চুক্তি এখনও অনিশ্চিতই রয়েছে বলে জানান জাকারিয়া। তিনি বলেন, ওই দুই চুক্তির বিষয়ে একাধিক দেশের আপত্তি ছাড়াও এ সংক্রান্ত প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে।
রোববার কাঠমান্ডুর হোটেল সল্টিতে সার্ক স্ট্যান্ডিং কমিটির দু’দিনব্যাপী বৈঠক শুরু হয়। গতকাল বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে কাঠমান্ডু ঘোষণার খসড়া বিষয়ে সমঝোতাই ছিল অন্যতম আলোচ্য বিষয়। এ বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়া কাঠমান্ডু ঘোষণার খসড়া আগামী ২৭ নভেম্বর শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিন প্রকাশ করা হবে। তার আগে এ খসড়া পর্যায়ক্রমে মন্ত্রী পর্যায়ের ও সরকারপ্রধান পর্যায়ের বৈঠকে উঠবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ সামনে রেখে কাঠমান্ডু ঘোষণার সমঝোতা চলছে। ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সরকারপ্রধানদের দু’দিনব্যাপী সম্মেলনে যোগ দিতে আজ কাঠমান্ডু পৌঁছবেন সার্কভুক্ত দেশের সরকারপ্রধানরা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মহড়া গতকাল দেখা গেল কাঠমান্ডুর রাস্তায়। ডামি গাড়ির সামনে পেছনে সাঁজোয়া যানের বহর দেখা গেল সাইরেন বাজিয়ে ছুটছে।
প্রথম দিন স্ট্যান্ডিং কমিটির বিদায়ী চেয়ারম্যান মালদ্বীপের আলী নাসির মোহাম্মদ বৈঠকের শুরুতেই নেপালের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব শংকর দাস বৈরাগীর কাছে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। সার্কের রীতি অনুযায়ী বৈঠক যে দেশে অনুষ্ঠিত হয় সে দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধানই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তী সার্ক সম্মেলন পর্যন্ত তিনিই এ পদে বহাল থাকবেন।
আগামীকাল সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে প্রত্যেক সদস্য দেশের সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানরা বক্তব্য রাখবেন। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন।
সার্ক নেতারা একটি অবকাশ যাপনে বিভিন্ন ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে সার্কে সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানো, দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়ন গড়ে তোলা, অভিন্ন মুদ্রা প্রচলন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারপর আট জাতির শীর্ষ নেতারা পৃথকভাবে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অপরাপর দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
হাসিনা-মোদি বৈঠকে প্রধান এজেন্ডা জঙ্গি ইস্যু : ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ আকবর উদ্দিন জানান, নেপালে সার্ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণ, দুই দেশে জঙ্গি ইস্যু এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয় গুরুত্ব পাবে। নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ আকবর উদ্দিনের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ভারতীয় পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।
আকবর উদ্দিন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি অনুপ চেটিয়ার প্রত্যর্পণ বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন। এদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কটূক্তির কারণে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.