কাঠমান্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন কাল

আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য যুব উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সাফটা ও সার্ভিস সেক্টরে সহায়তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ- মোটা দাগে এই ১০ ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে সার্ক সম্মেলনে গুরুত্ব আরোপ করছে ঢাকা। গত ২২শে নভেম্বর কর্মকর্তা পর্যায়ে (প্রোগ্রামিং কমিটি) বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এবারের ১৮তম আসরের বিভিন্ন পর্বে বিষয়গুলো উত্থাপন করছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২৬শে নভেম্বর শীর্ষ সম্মলনে প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভাষণ দেবেন সেখানেও এর অনেক বিষয় থাকছে। তিনি স্পষ্ট বলেছেন- এক একটি সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অনেক সিদ্ধান্ত নেয়ার হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে এবারে বিগত দিনের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর যথাযথ এবং সময়ানুগ বাস্তবায়নের ওপর বাংলাদেশ জোর দিচ্ছে। মন্ত্রীর মতে, গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে সার্ককে দক্ষিণ এশিয়ার গণমানুষের সংগঠনে পরণিত করা সম্ভব। বাংলাদেশ চায়- ওই প্রতিষ্ঠান আরও বেশি সাধারণ মানুষের উন্নয়নে ভূমকিা রাখুক। একই সঙ্গে সংগঠনটির র্কাযক্রম আরও বেশি দৃশ্যমান ও বিস্তৃত হোক। শুরুর দিনের প্রোগ্রামিং কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সার্ক ও বিমসটেক অনুবিভাগের মহাপরিচালক বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দু’দিনের সার্ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। গতকাল তা শেষ হয়েছে। আজ হবে কাউন্সিল অব মিনিস্টারস বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে সভা। ৩৬তম ওই সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশ নেবেন। কাল থেকে শুরু হওয়া দু’দিনের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজই কাঠমা-ু যাবেন। কালকের উদ্বোধনীতে ভাষণ দেয়া ছাড়াও অনেক সদস্য রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রধান বিরোধী দল ও বিরোধী জোটের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত ৫ই জানুয়ারির পর এই প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সেটি স্বীকার করেছেন। বলেছেন, নানা কারণে এবারের শীর্ষ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। উল্লখ্যে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দুটি সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ গ্রহণের সুযোগ এসেছিল। থিম্পুর ১৬তম আসর এবং মালদ্বীপের আদ্দু সিটির ১৭তম শীর্ষ সম্মেলন দু’টিতেই অংশ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন আজ: এবারের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ নেপাল যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৩টা নাগাদ তাকে বহনকারী বিমানটি কাঠমা-ুর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবে। স্থানীয় সময় ৪টা ১৫ মিনিটে কাঠমা-ুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন তিনি। বিমানবন্দরে  আনুষ্ঠানিকতা শেষে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাকে হোটেল ক্রাউন প্লাজা সোয়েলটি- কাঠমা-ুতে নিয়ে যাওয়া হবে। নেপাল সফরকালে তিনি সেখানে অবস্থান করবেন। কাল তিনি শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনীতে ভাষণ দিবেন। সেখানে একটি ফটো সেশনেও অংশ নিবেন। প্রথম দিনই সম্মেলনের সাইড লাইনে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আশরাফ গনি এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। ওই দিন নেপাল প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভায় অংশ নেবেন। পরদিন অবকাশের জন্য নেপালের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ধুপিখেল-এ নিয়ে যাওয়া হবে শেখ হাসিনাসহ সব শীর্ষ নেতাদের। সেখান থেকে ফিরে এবারের আয়োজনের সমাপনী পর্বে যোগ দেবেন তারা। এরপর নেপালের প্রেসিডেন্ট ড. রামবরণ যাদবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন অংশগ্রহণকারী শীর্ষ নেতারা। রাষ্ট্রপতির দেয়া ভোজসভায়ও যোগ দিবেন তারা। ২৮শে নভেম্বর দুপুরে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন।
তিন চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে: ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ -এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এবারের সার্ক সম্মেলনে ৩টি চুক্তি বা দলিল স্বাক্ষরিত হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সার্ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কিন্তু নেপাল থেকে প্রাপ্ত শেষ খবরে জানা গেছে এখনও অনেক দেশ চুক্তিগুলো সম্পাদনের ব্যাপারে তাদের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি। নেপাল অবস্থানরত বাংলাদেশী সাংবাদিকদের বরাতে যেসব খবরাখবর ঢাকায় এসেছে তাতে এখনও চুক্তিগুলো সম্পাদনের ইতিবাচক কোন ইঙ্গিত মেলেনি। আজ হবে সার্ক কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভা। সেখানেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আলোচনা থাকায় তিনটি চুক্তির দুটি আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং একটি জ্বালানি  সহযোগিতা বিষয়ক। চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হলে র্সাকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পণ্য ও মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। জ্বালানি সহযোগিতা আরও বাড়বে- যা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করবে। সর্বোপরি এ চুক্তিসমূহ স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

No comments

Powered by Blogger.