শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গে আমন্ত্রণ জানালেন মমতা

মানব সূচক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভারতীয় কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী। কিভাবে বাংলাদেশ সরকার এমন সাফল্য পেল তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহলও দেখিয়েছেন রাহুল। সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দশ সংসদ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুখ খান এমপি। দিল্লি আসার একদিন আগেই কলকাতার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করেন ফারুখ খানরা। সেখানে মমতাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফ থেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীও শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গে আসার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মমতা আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেও কবে তিনি ঢাকা আসবেন বা আদৌ আসবেন কিনা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এদিন কলকাতায় সারদা টিকফা কেলেংকারি নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করে মমতা বলেছেন, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু দেশ। ওই দেশের সঙ্গে আমাদের বহুদিনের বন্ধুত্ব। ওই দেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এসে দুই একজন লোক জঙ্গি কাজকর্ম করা মানে সবাই খারাপ নয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে যারা এসেছেন, আইনি স্বীকৃতি নিয়ে ভারতের নাগরিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে বিজেপির সন্ত্রাস মানা হবে না। এদিন নরেন্দ্র মোদিকেও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা।
রাহুল গান্ধীর ২৪ আকবর রোডের অফিসে প্রায় ৫০ মিনিট ধরে ছিটমহল থেকে সন্ত্রাসবাদ দমন-সহ নানা ইস্যুতে ভারত-বাংলাদেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলের। বিশেষ করে ছিটমহল চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে রাহুলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন তারা। এদিনই দিল্লিতে ভারতের যুগ্ম নির্বাচন কমিশনার ভিএস সম্পতের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। কিভাবে নির্বাচনী খরচ কমানো যায় এবং ইডিএম মেশিন বসানো যায় তা নিয়ে বিস্তারিত খুঁটিয়ে আলোচনা করা হয়। আজ দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শশী থারুরের সঙ্গেও বৈঠক করবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি বা রাজনাথ সিং দূরের কথা বিজেপির কোনো সর্বভারতীয় নেতার অ্যাপয়েনমেন্ট পাননি ফারুখ খানরা। শুধু বিজেপির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য চন্দন মিত্র দেখা করেছেন। তবে আজ বিপেপির যুবমোর্চার সভাপতি অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের কোনো সন্ত্রাসবাদীকেই পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে থাকতে দেয়া হবে না বলে একদিন আগেই ফারুখ খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। প্রতিনিধি দলকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিদের কোনো এলাকা নেই। সন্ত্রাসীরা যেখানেই থাকে, তাদের কাজ সন্ত্রাস করা। কিন্তু আইনের হাত অনেক প্রশস্ত। তাই জঙ্গিদের আইনের জালে ধরা পড়তেই হবে। পশ্চিমবঙ্গে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। জঙ্গিদের গ্রেফতার করে আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশী প্রতিনিধিরা নবান্নে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেন। এদিকে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশী স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রচারের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার জকি আহাদ। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থসম্পর্কিত বিষয় নিয়ে মমতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যদের অত্যন্ত হৃদ্যতার পরিবেশে কথা হয়েছে। আলোচনার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, শোন একটি মুজিবরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি... গানটির কিছু অংশ গেয়ে শোনান মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে উভয় দেশের সংস্কৃতি, বাণিজ্য এবং সামাজিক নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ও খোলোমেলা আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর আপ্যায়ন এবং সারল্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশী প্রতিনিধি দল বলে, এমন আন্তরিক ও অমায়িক প্রশাসক সত্যিই বিরল।

No comments

Powered by Blogger.