কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছে

‘ওরা আমাকে কুপ্রস্তাব দেয়। একবার নয়, বহুবার। বলে তার সঙ্গে সময় কাটাতে। ফোন করে নানা ভাবে কু অঙ্গভঙ্গির সুরে কথা বলে। তার এই আচরণে আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এখন আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছে।’ কথাগুলো বলে কাঁদছিলো সিলেটের বিউটিশিয়ান সুমি আক্তার রিয়া। মুখ, বুক, গলা, হাত তার এসিডে ঝলসে গেছে। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে শরীর। প্রচ- যন্ত্রণায় এখন হাসপাতালে ছটফট করছে। রিয়া সিলেট নগরীর উপ-শহরের দুলহান পার্লারের বিউটিশিয়ান। মূল বাড়ি ছাতক উপজেলার আলমনগরে। বর্তমানে সিলেট নগরীর উপ-শহরের এ ব্লকের ৪ নং রোডের ১৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা। রিয়া এসিডে আক্রান্ত হয়েছে শনিবার রাতে। পার্লার থেকে বাসায় ফেরার পথে গাড়িচালক রহিম তার ওপর এসিড ছুড়ে মারে। রিয়ার ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। প্রায় ৫ মাস আগে রিয়া ছিল নিউ বধূয়া বিউটি পার্লারের বিউটিশিয়ান। গত ২৮শে জুন নিজ কর্মস্থল থেকে মীরবক্স টুলায় যাওয়ার পথে মীরের ময়দান এলাকায় সে এসিডদগ্ধ হয়েছিল। ওই সময় তার ওপর এসিড ছুড়ে মারার ব্যাপারে মুখ খোলেনি রিয়া। এমনকি পুলিশ ও মানবাধিকার কর্মীদের জেরার মুখেও সে সব কিছু চেপে যায়। এ ঘটনার পর রিয়াকে আর চাকরিতে রাখেননি নিউ বধূয়া বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী নিপা বণিক। এরপর রিয়া চাকরি নেয় উপ-শহরের দুলহান বিউটি পার্লারে। বাসাও ভাড়া নেয় উপ-শহরে। রিয়ার ওপর এসিড নিক্ষেপকারী রহিম একজন গাড়িচালক। সিলেট নগরীর উপ-শহরের একটি স্ট্যান্ডের গাড়ি সে চালায়। রিয়া জানিয়েছেন, রহিমের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। পরিচয়ের পর থেকে রহিম গত কয়েক বছর ধরে তার পিছু নেয়। দেয়  প্রেমের প্রস্তাব। এক পর্যায়ে কুপ্রস্তাবও দেয়। রিয়া জানান, মীরের ময়দানে এসিড নিক্ষেপের আগে একই ভাবে রহিম তার কাছে অনর্গল কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু এসিড নিক্ষেপের পর সে কিছু দিন নীরব ছিল। বাসা ও কর্মস্থল পাল্টিয়ে উপ-শহরে যাওয়ার পর আবার তার উৎপাত শুরু হয়। গত কয়েক দিন ধরে অবিরত ভাবে ফোন করে রিয়াকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিল রহিম। কিন্তু রিয়া কোনভাবেই তার প্রস্তাবে সায় দিচ্ছিল না। রিয়া জানান, শনিবার রাতে উপ-শহরে পার্লার থেকে বাসায় ফিরছিল। এসময় রহিম এসে তার দিকে এসিড ছুড়ে মারে। তিনি জানান, রহিমকে চিনেছেন। এদিকে, ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রিয়াকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। গত দুই দিনে রিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। বারবার মূর্ছা যাচ্ছে সে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রিয়ার মুখ, গলা, হাত ও বুক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও সে শঙ্কামুক্ত নয়। এদিকে, রিয়ার ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় তার মা সুমা বেগম বাদী হয়ে সিলেটের শাহপরান থানায় মামলা করেছেন। সুমা বেগম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি ন্যায়বিচার চান। মেয়ের অনেক কষ্টের উপার্জিত টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলতো। এখন তারা পথে বসেছেন। তিনি বলেন, ওরা তার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। শাহপরান থানা পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনার পর থেকে তারা আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। এদিকে, গত জুন মাসে একই ভাবে নগরীর চালিবন্দরের দশমী রানী করের ওপর এসিড ছুড়ে মেরেছিল দুর্বৃত্তরা। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এদিকে, এসিড সন্ত্রাসের ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিলেটের নাগরিক সমাজ। মানবাধিকার সংগঠন এইচআরসিবিএম-এর সিলেটের জেনারেল সেক্রেটারি রাকেশ রায় গতকাল জানিয়েছেন, এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ন্যক্কারজনক। আর ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। তিনি বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং নারী মানবাধিকার সংগঠনের মোর্চার উদ্যোগে আগামী ৩০শে নভেম্বর সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.