সার্কের অগ্রগতি ও জনপ্রত্যাশা by সালমা ইসলাম

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনায় এ সংস্থার সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে অনেকেই যে হতাশা প্রকাশ করেন, এটি নতুন কিছু নয়। এর অন্যতম কারণ সার্কের প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের যে বিপুল প্রত্যাশা রয়েছে, তা পূরণ হয়নি। এ অঞ্চলের মানুষের এমন কিছু প্রত্যাশা রয়েছে, যা সার্কের বিভিন্ন সম্মেলনে আলোচনা হলেও বিষয়গুলো আলোচনার পর্যায়েই রয়ে গেছে। এতে এ সংস্থার প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমছে। এ অবস্থায় সার্কের কর্মপদ্ধতি এমনভাবে ঢেলে সাজানো উচিত যাতে এ সংস্থার প্রতি বিশ্ববাসীর আগ্রহ আরও বাড়ে। ঐতিহাসিকভাবে এ অঞ্চলের মানুষ পরস্পরকে সহযোগিতা করতেই পছন্দ করে। কিন্তু ব্যাপক দারিদ্র্যের কারণে এ সহযোগিতার ক্ষেত্রে যে ছন্দপতন ঘটছে এটাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় খনিজসম্পদ কম থাকলেও এ অঞ্চলের দেশগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হল মানবসম্পদ। এ সম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হলে সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে। বিশ্বে খনিজসম্পদ একসময় ফুরিয়ে যাবে। এতে খনিজ সম্পদনির্ভর যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে যে কোনো সময় অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। কিন্তু মানবসম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে উল্লিখিত সমস্যার মতো কোনো সমস্যার কারণে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ার আশংকা থাকে না।
বর্তমানে যে কোনো দেশের দ্রুত উন্নতির ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, সেসব এককভাবে মোকাবেলা করার চেয়ে যৌথভাবে মোকাবেলা করা অনেক সহজ। কোনো কোনো চ্যালেঞ্জ এককভাবে মোকাবেলা করতে গেলে অর্থনীতিতে কী অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে, ইবোলা ভাইরাসের দ্রুত বিস্তৃতিতে তা নতুন করে স্পষ্ট হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে বিভিন্ন আঞ্চলিক জোটের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, সেখানে আঞ্চলিক জোটকে প্রকৃতপক্ষে কার্যকর করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোই সবচেয়ে লাভজনক। সার্কের বিভিন্ন সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সংস্থার যে কোনো পর্যায়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দ দূরদর্শিতার পরিচয় দেবেন, এটাই সবার প্রত্যাশা। এতে সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
সার্কের কর্মকাণ্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে তুলনা করার প্রবণতা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সবার মনে রাখা দরকার, সার্ক ও ইইউর গঠনতন্ত্র আলাদা। কাজেই এ দুই সংস্থার কর্মপদ্ধতিও আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। ইইউর সঙ্গে সার্কের তুলনা করার ক্ষেত্রে এটাও মনে রাখা দরকার, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে ইইউকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। ইইউভুক্ত দেশগুলোয় একসময় যুদ্ধ লেগেই থাকত। সেসব যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির কথা ইউরোপবাসী আজও ভুলতে পারেনি। অনেক রক্ত ঝরার পর তারা বুঝতে পেরেছে, সহযোগিতার মূল্যই সবচেয়ে বেশি। এ নতুন উপলব্ধিই ইউরোপবাসীর চলার গতিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলাদা সচিবালয় ও সংসদ রয়েছে। ইইউর অধীনে বর্তমানে যে ব্যাপক কর্মকাণ্ড চলছে তার মাধ্যমে ইইউভুক্ত সব দেশই উপকৃত হচ্ছে। ইইউ এখন ইউরোপের বাইরেও বিভিন্ন দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখার বিষয়েও সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এটা এখন সবার কাছেই স্পষ্ট, সার্ককে গতিশীল করতে এ সংস্থার শীর্ষ বৈঠকগুলো যাতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। নিয়মিত শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি অল্প সময়ের নোটিশেও যাতে সার্কের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, এ ধারা চালু হলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গতি আসবে।
মিডিয়ায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক বিভিন্ন নিবন্ধ থেকে বোঝা যায়, কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠেয় ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সামনে রেখে এ সংস্থার প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের আগ্রহে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। সার্ক শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিভিন্ন তৎপরতা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়, এ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চুক্তি সই হবে, যা এ অঞ্চলের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে যোগাযোগ ও জ্বালানি খাতের চুক্তিগুলো সার্কভুক্ত দেশগুলোর উন্নয়নে দীর্র্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২.
সমগ্র বিশ্বে যেভাবে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে, এতে আগামীতে জ্বালানি সংকট কতটা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে বহুবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। তাই আগামীতে জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করলেও সার্কভুক্ত দেশগুলো যাতে ওই সংকট সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারে, এ বিষয়েও এ অঞ্চলের দেশগুলোর সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার। সম্প্রতি বাংলাদেশে যে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল- জ্বালানি নিরাপত্তাবিষয়ক চুক্তি এ ধরনের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় আঞ্চলিক গ্রিডলাইন স্থাপনের বিষয়টি অনেক দিন ধরে আলোচিত হলেও এ ইস্যুতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। জ্বালানি নিরাপত্তাবিষয়ক এ চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে। জ্বালানি নিরাপত্তাবিষয়ক আঞ্চলিক সহযোগিতা অক্ষুণ্ন থাকলে পাইপলাইনের মাধ্যমে হাজার মাইল দূরের দেশ থেকেও যৌক্তিক দামে গ্যাস আমদানি করা যায়, যা শিল্প খাতে ব্যবহার করাও লাভজনক হবে। এককভাবে কোনো দেশ এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা চিন্তাও করবে না। কারণ এতে বিপুল অর্থের অপচয় হবে। ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে।
সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত নেপালের বাণিজ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার থেকেও স্পষ্ট হচ্ছে, এবারের সার্ক সম্মেলনে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টি আনুষঙ্গিক আরও অনেক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি সার্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও বিভিন্ন আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। সার্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মতো এ ধরনের অন্য প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে তা সার্কভুক্ত দেশগুলোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
যোগাযোগ খাতের চুক্তি নিয়ে বর্তমানে যেসব আলোচনা চলছে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে পর্যটনের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। কেবল অবকাঠামোগত বাধার কারণে হিমালয় থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত পর্যটনের বিশেষ সম্ভাবনাটি আলোর মুখ দেখছে না। ১৯৮৫ সালের শেনজেন চুক্তির (Schengen Agreement) মাধ্যমে ইইউর কয়েকটি রাষ্ট্রে পাসপোর্টবিহীন সীমান্তের নতুন ধারণা সৃষ্টি হয়। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন নতুন গতি এসেছে, তেমনি পর্যটন খাতে বিভিন্ন দেশের উপকৃত হওয়ার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ১৯৯২ সালে নেদারল্যান্ডসে ম্যাসট্রিখটে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে ইইউর সদস্য দেশগুলো একক মুদ্রার আওতায় বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছে। বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসিয়ানের (The Association of Southeast Asian Nation) নামও গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে সার্ক গঠনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল সদস্য দেশগুলোর জনগণের জীবন মানের উন্নয়নের পাশাপাশি এ অঞ্চলের জনগণের পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ককে দৃঢ় করা। সার্কের প্রতিটি সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুতে সহযোগিতা সুদৃঢ় করার ঘোষণা এলেও প্রকৃতপক্ষে সার্কের ধীরগতির বিষয়টি দুঃখজনক।
৩.
সার্কের অগ্রগতি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে যত হতাশাই ব্যক্ত করা হোক না কেন- এ অঞ্চলের দেশগুলোর মানুষের সার্বিক জীবনমানের দ্রুত উন্নয়নে এ সংস্থা যে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইইউর সঙ্গে তুলনা করে সার্ক সনদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে যেসব সমালোচনা রয়েছে- সেসব বিবেচনায় নিয়ে সার্ক সনদ পরিবর্তনের বিষয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দকে নতুন করে ভাবতে হবে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নের প্রধান বাধা দারিদ্র্য। এ সমস্যা দূর করার জন্য প্রতিটি দেশেই চলছে বহুমুখী তৎপরতা। এর পাশাপাশি সার্কের আওতায় এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে বাকি বিশ্বের তুলনায় এ অঞ্চলের কোনো দেশের মানুষ পিছিয়ে না থাকে। মাত্র কয়েক দশক আগেও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল আমাদের মতোই। সিঙ্গাপুরের দ্রুত অগ্রগতির পেছনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতা।
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের পরিধি বেড়েই চলেছে। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার তুলনায় বহুপক্ষীয় সহযোগিতার সুফলের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক সংস্থার কার্যক্রমের পরিধিও দ্রুত বাড়ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সহযোগিতার পরিধি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন নতুন প্রযুক্তি যেমন মানুষের সামনে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করছে, একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহারের আশংকাও বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে অপরাধীরা যাতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে সক্রিয় হতে না পারে এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার বহুমুখী সম্পর্ক যত জোরদার হবে, অপরাধীদের অপতৎপরতার সুযোগ তত কমবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার সব সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
৪.
কোনো একটি অঞ্চলের কিছু দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কাক্সিক্ষত গতির অভাব স্পষ্ট হলে এ নিয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর উদ্বেগ বাড়ে। ইবোলা ভাইরাসের মতো যে কোনো নতুন চ্যালেঞ্জ বিশ্ববাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বের প্রত্যেক সচেতন মানুষেরই প্রত্যাশা- বিশ্বের সব অঞ্চলের মানুষ সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের আওতায় আসুক। পিছিয়ে পড়া যে কোনো মানুষের দ্রুত উন্নয়নের জন্য মানসম্মত শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। কাজেই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সার্কভুক্ত দেশগুলো বিশেষ উদ্যোগ নেবে- এটাও সবার প্রত্যাশা। মানসম্মত শিক্ষা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহের সঞ্চার হবে, যা প্রতিটি দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
১৭ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বে সব ধরনের ক্যান্সারে যত মানুষ মারা যায় তার ২৭ শতাংশ চীনের। অথচ চীনে বসবাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে ২০১৩ সালে মাথাপিছু আয় ছিল নয় হাজার মার্কিন ডলারের বেশি- যা সার্কভুক্ত সব দেশের মাথাপিছু আয় থেকে বেশি। চীনে ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যাটি বিবেচনায় নিলেই স্পষ্ট হয়- স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন জটিল সমস্যা সফলভাবে মোকাবেলার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা কত জরুরি। ক্যান্সারসহ অন্যান্য জটিল রোগের বিরুদ্ধে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলের কোনো রোগীকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে হবে না।
৫.
যে কোনো ফসলের উচ্চফলনশীল জাতের প্রতি সমগ্র বিশ্বে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে শস্যের পুরনো অনেক জাত ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে। আগামীতে যে কোনো সময় কোনো অনিবার্য কারণে নতুন জাতের পাশাপাশি পুরনো জাতের আবাদও জরুরি হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু
ততদিনে দু-একটি জাত ছাড়া পুরনো জাতগুলো যে হারিয়ে যাবে এটা জোর দিয়েই বলা যায়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও সার্ককে উদ্যোগ নিতে হতে পারে। অপ্রচলিত জাতের শস্যের বীজ সংরক্ষণের মতো আপাতদৃষ্টিতে কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডকেও সার্কের আওতাভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ সার্কের কর্মকাণ্ডকে এমনভাবে বিস্তৃত করতে হবে যাতে আগামীতে সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতি এ অঞ্চলের দেশগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণের মতো কাজগুলোকেও সার্কের আওতাভুক্ত করা দরকার।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ সামুদ্রিক ঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতি কী করে মোকাবেলা করবে, তা নিয়ে এখনও আতংকে থাকে। সিডর, আইলায় যারা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে- সেই মানুষগুলোর ক্ষতিপূরণের উপায় কী? বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ প্রত্যাশিত হারে কমছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোতে জলবায়ু উদ্বাস্তুসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বিশ্ব সম্প্রদায় অনেক প্রতিশ্র“তি দিলেও সেসব প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই আলোর মুখ দেখেনি। এ প্রেক্ষাপটে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে সার্কের পক্ষ থেকে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এ অঞ্চলের কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে সার্কের উদ্যোগে কৃষি খাতের গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। প্রাণিসম্পদ সুরক্ষার জন্যও বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নে এমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে তাদের সরাসরি উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
৬.
১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সড়ক ও রেলপথে বহুমাত্রিক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে- এ চুক্তির মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর বহুমাত্রিকভাবে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে। ইতিমধ্যে মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, উল্লিখিত চুক্তির আওতায় এক দেশের পণ্য ও যাত্রীবাহী বাহন অন্য দেশে যাবে এবং অন্য দেশের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দেশের পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে যে সুবিধা সৃষ্টি হবে, তাতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
আমরা জেনেছি, নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের মংলা বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে আমদানিকৃত কয়লার ওপর ভিত্তি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে- তার বাস্তবায়ন শুরু হলে নেপাল ও ভুটান মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাবে কিনা তা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে এবং সেই সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে কোন কোন দেশের আগ্রহ রয়েছে তা যাচাই করে দেখতে হবে। সড়ক ও রেলপথে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য আনা-নেয়া শুরু করার আগে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে।
৭.
পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য সারা বিশ্বে নানারকম পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের দেশগুলো অনেক
পিছিয়ে আছে। কেবল ভারতেই প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ পর্যটক আসে। সমন্বিত উদ্যোগ নিলে সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোতেও পর্যটন খাতে আয়ের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর জনগণ সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোয় যে কোনো উপলক্ষে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা না পেলে নিু আয়ের মানুষ দেশ ভ্রমণের কথা ভাবতেও পারবে না। তাই সীমিত আয়ের মানুষের সামর্থ্যরে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সার্কের আওতায় এমন পদক্ষেপ নেয়া দরকার যাতে তারা কম খরচে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে পারে।
এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য সার্কের আওতায় ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সেসব পদক্ষেপ সার্কভুক্ত দেশের জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে তা যাচাই করে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও প্রকৃতপক্ষে সেসব কয়েকদিনের আনুষ্ঠানিকতায় সীমিত থাকে এবং সেসব সম্মেলনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা থাকে নগণ্য। এসব সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখে সার্কের আওতায় যে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কর্মসূচি এমনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে এসব কর্মসূচির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ অব্যাহত থাকে। বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হলে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে- এ বিষয়ে গবেষণাও অব্যাহত রাখতে হবে।
৮.
সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিপুলসংখ্যক শিশু অপুষ্টির শিকার, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এখনও মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত; একেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর বিদ্যমান উদ্বাস্তুদের সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন অনেক উদ্বাস্তু। এসব মৌলিক সমস্যা দ্রুত সমাধানের ক্ষেত্রে সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। বাজেট স্বল্পতার কারণে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব না হলে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে সার্কের আওতায় প্রতীকী উদ্যোগ অব্যাহত থাকলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হবে। তবে সেসব উদ্যোগ যেন দীর্ঘসময় প্রতীকী উদ্যোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের বাধা দূর করতে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় তা বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। এ অঞ্চলের দেশগুলোর সক্ষমতা দ্রুত না বাড়লে সার্কভুক্ত দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে এসব খাতে দ্রুত উন্নতি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে তা এ অঞ্চলের দেশগুলোর সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কাজেই শিক্ষা ও গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন খাতে এ অঞ্চলের দেশগুলো যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। মহাকাশ গবেষণায় ভারত যে সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে- এ অঞ্চলের সব দেশ যাতে সে রকম ব্যতিক্রম সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়, সেই লক্ষ সামনে রেখে বহুমুখী তৎপরতাও অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রতি বছর এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য প্রচুর মানুষ সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে যায়। এখন মালয়েশিয়ায়ও আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আধুনিক হাসপাতাল চালু হয়েছে। এসব হাসপাতালে রোগীরা কী কী আধুনিক সুবিধা পাবে সেসব তথ্য দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক স্বাস্থ্য প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়। এসব তথ্য থেকে এটাই স্পষ্ট হয়- মালয়েশিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা মধ্যবিত্তের পক্ষে সম্ভব হবে না। কাজেই মধ্য ও নিু আয়ের মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে কম ব্যয়ে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে কম খরচে চিকিৎসাসেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়ে উঠবে। এ অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সার্কের আওতায় অত্যাধুনিক হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
সার্কভুক্ত দেশগুলো বিনিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশেষভাবে উপকৃত হওয়ার পথ খুঁজছে। তাদের মধ্যকার আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক যত হতাশাই ব্যক্ত করুন- আশা করা যায়, আগামী দিনগুলোতে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। বিভিন্ন সম্মেলনে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবায়নে কেন দেরি হয়- তা চিহ্নিত করে সমস্যাগুলোর সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী দিনগুলোয় সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বহুমাত্রিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
৯.
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে সমগ্র বিশ্বের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। বর্তমানে দূষণ পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। পরিবেশ দূষণ রোধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত না রাখলে বিশ্ববাসীকে আগামীতে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে, বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সার্কভুক্ত দেশগুলো এ অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
অভিন্ন নদী ব্যবস্থাপনাসহ পানিসম্পদের সর্বোচ্চ ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো নদীর উজানে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে যদি নদীর স্বাভাবিক স্রোত হারিয়ে যায়- এতে উজানের দেশটি সাময়িকভাবে উপকৃত হলেও একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে প্রকৃতপক্ষে উজানের দেশও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সম্প্রতি কয়েকটি দেশের একদল বিজ্ঞানী পৃথিবীজুড়ে সমুদ্রের বিভিন্ন এলাকায় বহুমাত্রিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এবং এক হাজার বছরের ইতিহাসের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এ আশংকা প্রকাশ করেছেন, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্র মাছের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার অতিরিক্ত হারে মাছ ধরার বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৪৮ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব সমুদ্র মৎস্যশূন্য হতে পারে। অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারে মিঠা পানির বিস্তীর্ণ অঞ্চল ইতিমধ্যে মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে। আবাদি জমি বাড়ানোর ফলে স্বাভাবিকভাবেই মাছের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। মাছের বিকল্প হিসেবে অন্য উৎস থেকে আমিষের চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করা হলেও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অনুপস্থিতিতে পরিবেশের যে বিপর্যয় হবে তা ঠেকানোর উপায় কী?
১০.
বিনিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় খোঁজার পাশাপাশি পৃথিবীতে বিভিন্ন উপকারী প্রাণীর সংখ্যা কত কমেছে এবং বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণে কী করণীয়- এসব ব্যতিক্রমী বিষয়েও সার্কের গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। জীববৈচিত্র্য নষ্ট হলে আগামীতে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এবং তা মানবসভ্যতার জন্য কী হুমকি হয়ে দেখা দেবে- এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বহুবার সতর্ক করেছেন। বিজ্ঞানের এত অগ্রগতির পরও ইবোলা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের কেন এত দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করতে হচ্ছে, সার্কের আওতায় এসব বিষয়েও মৌলিক গবেষণার পরিধি বাড়াতে হবে। উন্নত কোনো দেশও যখন এসব বিষয়ে এককভাবে গবেষণা করে কাক্সিক্ষত সুফল পায় না, তখন স্পষ্ট হয় এ অঞ্চলের দেশগুলোর যৌথভাবে কাজ করা কত জরুরি। উন্নয়নশীল কোনো দেশে ইবোলা ভাইরাসের মতো সমস্যা সৃষ্টি হলে তা দেশটির অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং তা থেকে যে বহুমুখী সংকট সৃষ্টি হবে তাও সহজেই অনুমান করা যায়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোর বিভিন্ন সম্পদ কাজে লাগানোর পরিবেশবান্ধব উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সার্ক সম্মেলনে এসব জরুরি বিষয়সহ বহুমুখী আলোচনা হলে এবং এ অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সার্ক কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলে এ সংস্থার প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি : প্রকাশক, যুগান্তর

No comments

Powered by Blogger.