এমপি গ্রেফতারে স্পিকারের অনুমতি লাগে না

মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফেরার পর তাকে গ্রেফতার না করার বিষয়ে পরস্পরবিরোধী কথা বলেছেন স্পিকার ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তাদের এ বক্তব্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করার জন্য স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই বলে দাবি করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের কথা বলছেন, তারা না জেনে বলছেন। কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী শুধু সংসদ লবি, সংসদ গ্যালারি, স্পিকারের কার্যালয় কিংবা স্পিকার ঘোষিত সুনির্দিস্ট কোনো এলাকা থেকে সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন। এছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে সংসদ সদস্যদের গ্রেফতারে স্পিকারের অনুমতি লাগে না। তবে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা হলে তা স্পিকারকে অবহিত করার বিধান রয়েছে।
সোমবার জাতীয় সংসদ ভবন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর আগে রোববার রাতে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফেরেন। এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে কেন গ্রেফতার করা হল না- এমন প্রশ্নের জবাবে সোমবার সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও স্পিকারের অনুমতি না থাকায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করতে পারছে না আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলছে, আর আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সংসদ সদস্য পদে এখনও বহাল রয়েছেন। তাই তাকে গ্রেফতার করার আগে স্পিকারের অনুমতি প্রয়োজন। স্পিকার ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এমন বিপরীতমুখী বক্তব্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, তিনি যা বলেছেন তা ভুল। শুধু তিনি একা নন, পত্রিকায় দেখলাম দেশের একজন খ্যাতনামা আইনজীবীও তার লেখায় একই কথা বলেছেন। তিনিও ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে স্পিকারের অনুমতির কিছুই নেই। তবে ১৯৬৩ এবং ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান আমলের প্রণীত দুটি আইনে বলা আছে- সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে ও সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার ১৪ দিন পর্যন্ত সময়ে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা যাবে না।
স্পিকার বলেন, নবম জাতীয় সংসদে তিনি স্পিকার থাকার সময়েও কয়েকজন সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিষয়টি তাকে অবহিত করার পর তিনি তা জাতীয় সংসদে পাঠ করে শুনিয়েছেন। এটাই বিধান। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা প্রসঙ্গে কোনো চিঠি দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্পিকার বলেন, এ বিষয়ে এখনও তাকে কিছুই জানানো হয়নি। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফেরার আগে তাকে (স্পিকারকে) অবহতি করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে ড. শিরীর শারমিন চৌধুরী বলেন, না।
আগেও অনেক সংসদ সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন : সংসদ সদস্যদের অনেকেই অতীতে গ্রেফতার হয়েছেন। এক্ষেত্রে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কারও কোনো অনুমতি নেয়নি। বিগত নবম জাতীয় সংসদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক, সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নিলোফার চৌধুরী মনি, রেহানা আক্তার রানু এবং সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়াকে আইনশৃংখলা বাহিনী গ্রেফতার করে। এনিয়ে তখন বিতর্ক ওঠে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- গ্রেফতারে স্পিকারের অনুমতি প্রয়োজন। তখনও এ দাবির সত্যতা নেই বলে দাবি করেন তৎকালীন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরও আগে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় মুহিবুর রহমান মানিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সংসদে আসছেন লতিফ সিদ্দিকী, বিকাল থেকে গুঞ্জন : মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ এখনও বহাল আছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের জন্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে চিঠি দেয়া হবে বলে জানানো হলেও গত দুই সপ্তাহে এ বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিষয়টি অনেকটা ধামাচাপাই পড়ে ছিল। কিন্তু আবার বিষয়টি সামনে উঠে আসে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফেরায়। খবর রটে, সোমবার বিকালে সংসদ অধিবেশনেও যোগ দিচ্ছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। সংসদের ভেতরেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অধিবেশনে যোগদান ইস্যু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সংসদমুখী হননি।
গ্রেফতার না করায় এরশাদ ও বাবলুর প্রতিবাদ : ইসলামের অবমাননাকারী সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরেই তাকে গ্রেফতার না করায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, লতিফ সিদ্দিকী শুধুমাত্র মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেননি- তিনি বাংলাদেশের সংবিধানকেও অবজ্ঞা করেছেন। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও কি করে পুলিশের সামনে দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গেলেন- তা বোধগম্য নয়। তিনি কি আইনেরও ঊর্ধ্বে? বিবৃতিতে তারা বলেন, অবিলম্বে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করা না হলে জাতীয় পার্টি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে।

No comments

Powered by Blogger.