চট্টগ্রামে ৫ ‘জঙ্গি’ গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে রহস্য

জঙ্গি সন্দেহে চট্টগ্রামে পাকিস্তানি নাগরিকসহ গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। এদের মধ্যে একজন বান্দরবান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাও রয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার মহানগর হাকিম আহমদ সাঈদ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদেশ দেন। এর আগে দুপুরে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। যাদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ আলম, আবদুল মজিদ, মো. আমিন, মো. শফিউল্লাহ ও মো. ছালামত উল্লাহ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মোহাম্মদ আলম পাকিস্তানি নাগরিক। অন্যদিকে শফিউল্লাহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক। তিনি সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার প্রসিকিউশন কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বলেন, আদালতে ১৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিচারক সব কিছু শুনে প্রাথমিকভাবে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত রোববার নগরীর জিইসি  মোড়ের হোটেল লর্ডস ইন থেকে জঙ্গি সন্দেহে পাকিস্তানি নাগরিকসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাদের মধ্যে একজন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির আওয়ামী লীগ নেতা। গ্রেপ্তারের পরপরই নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান তাদেরকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া শফিউল্লাহ (৪০) দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর আগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগ শোনা যায়। তার পিতা ছালেহ আহমদ একসময় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরএসও’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নাইক্ষ্যংছড়ির প্রভাবশালী এই পরিবারের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসা  রোহিঙ্গাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেও শোনা যায়। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গত ২১শে নভেম্বর বাংলাদেশে আসেন পাকিস্তানি নাগরিক আলম। তিনি ব্যবসায়ী পরিচয়ে হোটেল লর্ডস ইনে ওঠেন। হোটেলের কক্ষ বরাদ্দের বই ঘেঁটে দেখা যায়, আলম বিদেশী ব্যবসায়ী পরিচয়ে প্রথমে ৭০১ নং রুম ভাড়া নেন। পরে রুম পরিবর্তন করে নেন পাশের ৭০২ নং কক্ষটি। শফিউল্লাহ আসেন পরদিন  রোববার সকালে। এরপর সবাই চলে যান ৬০২ নং কক্ষে।
দুপুরের দিকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ টিম ওই হোটেলে হানা দেয়।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাকিস্তানি নাগরিক আলম জানান, তিনি হল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা  গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টার (জিআরসি)-এর পরিচালক। ঘটনার পরপরই পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ কমিশনার যৌথ সেল গঠন করেন। তবে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ রয়েছে কিনা সেই বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
স্পিকার ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দুই মত: আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের আইনি দিক নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী এখনও সংসদ সদস্য পদে বহাল রয়েছেন। এ কারণে তাকে গ্রেপ্তার  করতে হলে স্পিকারের অনুমতি লাগবে। অন্যদিকে স্পিকার বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারে তার অনুমতির দরকার নেই। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আইনি জটিলতার কারণে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্পিকারের অনুমতি ছাড়া একজন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা যায় না। তবে পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নাকচ করে দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে তার কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী শুধুমাত্র সংসদ লবি, গ্যালারি ও চেম্বার  থেকে কোন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এছাড়া, কোন অনুমতি লাগে না। তবে কোন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলে স্পিকারকে অবহিত করার বিধান রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.