সবই পারে ঢাবি ছাত্রলীগ

টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া, পেশিশক্তি প্রদর্শনের মতো সব কাজেই পারঙ্গম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী। এমন কোন কাজ নেই যা তারা পারে না। ছাত্রলীগ নেতাদের হুঙ্কারে অসহায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিরুপায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া কোন উপায় নেই কারও। তাদের অপকর্মে সহযোগিতা না করলে নেমে আসে নির্যাতন ও অপবাদের খড়গ। গত ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর ছাত্রলীগ এ অপকর্ম আরও বেড়েছে। কোনভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না তাদের। কর্মীদের মাঠে নামিয়ে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন কিছু নেতা। পুলিশের হাতে ধরা খেলেও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আবার বের হয়ে আসছেন। ফলে কর্মীদের অপরাধী কর্মীদের ভাবতে হয় না কোন কিছু নিয়ে। তাদের ছিনতাইয়ের স্পট ক্যাম্পাসজুড়ে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুরু করে দোয়েল চত্বর, পলাশী মোড়, শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, শাহবাগ, ফুলার রোড। সন্ধ্যা নামার পর সক্রিয় হয় তারা। ১৬ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুধাংশু শেখর রায় টিএসসি এলাকায় ছিনতাইকারীর শিকার হন। দু’জন ছিনতাইকারী অস্ত্র ধরে ওই শিক্ষকের কাছে যা ছিল সবই নিয়ে যায়। সূত্র জানায়, পূজা ও ঈদের আগ মুহূর্তে পলাশী মোড়ে প্রচুর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মোড়ে ছাগলের হাট বসায় আপন, তাহসান। ৩০শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক মহিলার কাছ থেকে সর্বস্ব কেড়ে নেয় শুভ। এর আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোড থেকে সাড়ে  ৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি (আর ওয়ান-৫, ইয়ামাহা ব্র্যান্ড) বাইক ছিনতাই করে এসএম হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাতে ১০ বছরের এক শিশুকে এসএম হলে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে ও মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয় ছাত্রলীগ হল শাখার নেতাকর্মীরা। জিয়াউর রহমান হলের ছাত্রলীগ সভাপতি আবু সালমান প্রধান শাওন চাঁনখারপুলের আফতাব রেস্টুরেন্টের মালিক আফতাবকে তুলে এনে মারধর করে। ৩রা সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ভবন এলাকা থেকে আরিফ নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীকে অপহরণ করে ৬৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় শহীদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগ নেতারা। চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোটরসাইকেল চুরির ৩৮টি মামলা হয়েছে শাহবাগ থানায়। এসব চুরির পেছনেও এক শ্রেণীর ছাত্রনেতার সম্পৃক্তার অভিযোগ রয়েছে।
চলতি বছর অন্তত ১৩টি অপহরণের ঘটনা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ১৩ই ফেব্রুয়ারি সূর্যসেন হলে মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের তরিকুল ইসলামকে অপহরণ করে আটকে রাখে আরিফুর রহমান। ২৮শে ফেব্রুয়ারি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের এক দোকানদারকে ধরে নিয়ে আসে। ৬ই মে ফার্সি বিভাগের প্রথম বর্সের শিক্ষার্থী এ বি মাইনুল ইসলামকে চান খাঁর পুল থেকে অপহরণ করে ঢাকা কলেজের বিলুপ্ত কমিটির প্রচার সম্পাদক সোহেল রানা। ৯ই মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ থেকে এ ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৮ই নভেম্বর জগন্নাথ হলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা উৎপল সাহার ছোট ভাই বহিরাগত উদয় সাহা এক গাড়ির চালককে হলে এনে আটকে রাখে। এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা বলেন, আমার জানা মতে, ছাত্রলীগের কেউ ক্যান্টিনে ফাও খায় না। তারা অপহরণ বা অন্য কোন কাজেও জড়িত না। যদি কেউ তথ্যপ্রমাণ দেয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ করবো যাতে তারা আইনি ব্যবস্থা নেন।

No comments

Powered by Blogger.