নন্দিতার ঘটনা নাড়া দিলো সবাইকে by ওয়েছ খছরু

সিলেটের নন্দিতার ঘটনা নাড়া দিয়েছে সবাইকে। আতঙ্কিত করে তুলেছে অভিভাবক মহলকে। রাস্তায় সন্তানের দুর্ঘটনা এড়াতে নন্দিতার মা মায়া দেবী মেয়েকে স্কুলে নিয়ে আসতেন। আবার ছুটির পর নিয়েও যেতেন। কিন্তু এত সতর্ক থাকার পরও পরীক্ষার হলেই নন্দিতাকে নির্মমভাবে কুপিয়েছে বখাটেরা। ঘটনাটি গতকাল সিলেটে ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নন্দিতা দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সিলেট নগরীর শিবগঞ্জের হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শিবগঞ্জ সেনপাড়ার ‘আল্পনা’ ১৭ নম্বর বাসার গুণেন্দ্র সিংহের মেয়ে সে। শনিবার ছিল তার ইংরেজি ২য় পত্রের পরীক্ষা। এ কারণে পরীক্ষা শুরুর আগে বেলা দেড়টার দিকে নন্দিতার মা মায়া দেবী নিজেই মেয়েকে নিয়ে স্কুলে আসেন। পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে দিয়ে চলে যান। বেলা দেড়টার দিকে নন্দিতা শ্রেণীকক্ষে বসা ছিল। এমন সময় তার সহপাঠী ও দশম শ্রেণীর ছাত্র  মোশাররফ হোসেন সাকিব ও মামুন হলে ঢুকে প্রথমে নন্দিতাকে চড়-থাপ্পড় মারে। এক পর্যায়ে সঙ্গে থাকা ছোরা দিয়ে আঘাত করে। নন্দিতা চিৎকার শুরু করলে শিক্ষকরা এগিয়ে আসেন। এ সময় বন্ধু সহ সাকিব পালিয়ে যায়। পরে স্কুলের শিক্ষকরা গুরুতর আহত অবস্থায় নন্দিতাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। নন্দিতার বড় ভাই মানস সিংহ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সাকিব নন্দিতাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতো। এ বিষয়টি নন্দিতা তার পরিবারের কাছে জানায়। এতে পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরপর থেকে মা মায়াদেবী নন্দিতাকে নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতেন। ফেরার পথে নিয়েও আসতেন। সুযোগ না পেয়ে সাকিব স্কুলের ভেতরেই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান মানস। নন্দিতার মা মায়াদেবী জানান, শ্রেণীকক্ষের ভেতরে মেয়েটি অনিরাপদ হবে সেটি ভাবতেও পারেন নি। তিনি বলেন, ছুরিকাঘাতের পর থেকে নন্দিতা ভয় পেয়ে গেছে। মাথা ও গালে বেশ আঘাত পেয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে, এ ঘটনার পর শনিবার রাতেই মানস সিংহ বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে সাকিবকে। তার বাড়ি সিলেট নগরীর সোনারপাড়া আবাসিক এলাকায়। ঘটনার পর থেকেই সাকিব পলাতক। পুলিশ সাকিব ও মামুনকে গ্রেপ্তার করতে বেশ কয়েকটি অভিযান চালালেও তাদের ধরতে পারেনি।  সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এলাইছ মিয়া সাংবাদিকদের জানান, নন্দিতার ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান। শাহপরান থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন জানান, মোশারফ হোসেন সাকিব একাই নন্দিতার ওপর হামলা করেছে বলে স্কুলের ছাত্রীরা জানিয়েছে। সাকিব ও নন্দিতা একই ক্লাসে পড়তো। তাদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল। নন্দিতার সহপাঠীরা জানান, সাকিব স্কুলে সব সময় দলবল নিয়ে আড্ডা দিতো। তার বখাটেপনার বিষয়টি সবার জানা থাকলেও কেউ প্রতিবাদ করতো না। এ কারণে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে সাকিব পরীক্ষার হলেই হামলা চালালো।

শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ: সিলেট নগরীর সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহপাঠীর ছুরিকাঘাতে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী নন্দিতা দেবী আহত হওয়ার ঘটনা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। রোববার সকালে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসক ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। মন্ত্রী এ হামলার ঘটনাকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও নৈতিক অবক্ষয় বলে আখ্যায়িত করে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বখাটেদের কঠোর হস্তে দমন ও পড়ালেখার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখারও নির্দেশ  দেন। মন্ত্রী ফোনে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ  আক্রান্ত শিক্ষার্থীর পরিবারকে সান্ত্বনা দানের পাশাপাশি আইনি সহায়তা প্রদানেরও আশ্বাস দেন। শনিবার বিকালে সাকিব নামের এক সহপাঠীর ছুরিকাঘাতে সৈয়দ হাতিম আলী স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী নন্দিতা গুরুতর আহত হয়। প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় সাকিব তাকে ছুরিকাঘাত করে। আহত নন্দিতাকে নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.