এ বছরেই ঘটবে প্রথম ‘অনলাইন খুন’!

ওত পেতে রয়েছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘটাবে মারাত্মক কোনো অপকর্ম। ইউরোপের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইউরোপোল সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছে, এ বছরের শেষ নাগাদই কেউ না কেউ ‘মারাত্মক আহত বা খুন’ হয়ে যাবেন। কিন্তু এই ‘অনলাইন খুন’ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর কিন্তু তেমন কোনো প্রস্তুতিই নেই।
ইউরোপোল ধারণা করছে, নিরাপদ বলে দাবি করা জটিল যন্ত্রগুলোতে কম্পিউটার আক্রমণের মাত্রা বেড়ে গিয়ে কাউকে ‘আহত করা বা খুনের মতো ঘটনা’ শিগগিরই ঘটতে পারে। দ্য ইনডিপেনডেন্ট এ বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
‘ইন্টারনেট অব থিংস’ নামের কথিত নেটওয়ার্ক থেকে আসন্ন এই বিপদ মোকাবিলায় পুলিশকে ফরেনসিক কৌশল বা পদ্ধতি গ্রহণ করা বা পদ্ধতির আরও উন্নয়ন করা প্রয়োজন হবে বলেই জানিয়েছে ইউরোপোল। ইন্টারনেট অব থিংস হচ্ছে সবকিছুতেই ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা। যাতে গাড়ির গ্যারেজের দরজা থেকে শুরু করে হাসপাতালের হেলথ সিস্টেম—সবকিছুই কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ডিভাইস বা যন্ত্রে ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ বা ‘সব যন্ত্রেই ইন্টারনেট’ এখন বহুল আলোচিত এই বিষয়। ইন্টারনেট অব থিংস বিষয়টিকে সংযোগ সুবিধার যন্ত্র যেমন গাড়ি, পোশাক বা গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট আন্তসংযোগ হিসেবে বোঝানো হয়। প্রতিটি যন্ত্র যাতে তারবিহীন যোগাযোগ পদ্ধতিতে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে পারে, সেই নেটওয়ার্কই ‘ইন্টারনেট অব থিংস’।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ সতর্ক করে জানিয়েছে, যন্ত্র ঠিকমতো রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে তা দুর্বৃত্তদের দ্বারা হ্যাক হয়ে যাবে এবং এ থেকে দুর্বৃত্তরা অর্থ দাবি করবে কিংবা অপরকে আক্রমণ করে বসবে।
ইউরোপোলের করা হুমকি মূল্যায়নের প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান টুডির একটি পূর্বাভাসকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধার পণ্য হ্যাক করে ২০১৪ সালের শেষ নাগাদই প্রথম খুন সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য, এখন পর্যন্ত এ ধরনের যন্ত্রে কারসাজি করে কোনো খুনের ঘটনার প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু অনেকবারই হ্যাকাররা কম্পিউটারের নিরাপত্তা সিস্টেমের ত্রুটি বের করে দেখিয়েছে।
এর আগে নিউজিল্যান্ডের আলোচিত হ্যাকার বারনাবি জ্যাক ক্যাশ মেশিন হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল এবং ইনসুলিন পাম্প হ্যাক করার কৌশল দেখিয়েছিলেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে ব্ল্যাক হ্যাট সম্মেলনে ১ আগস্ট চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি কীভাবে হ্যাক করা যায় তা দেখানোর কথা ছিল বারনাবির। কিন্তু তার আগেই আকস্মিকভাবে মারা যান তিনি।

ডিক চেনি
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি দীর্ঘদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত। গত বছর তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর হৃৎযন্ত্রে প্রতিস্থাপিত ডিফাইব্রিলেটর যন্ত্রের ওয়্যারলেস ফাংশন অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। কারণ যে কেউ এটা হ্যাক করে হার্ট অ্যাটাক ঘটিয়ে দিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কায় থাকেন। চেনির এ ধারণাটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থ্রিলার সিরিজও হয়েছে। চেনি বলেছিলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তিনি সচেতন।’
ইউরোপোলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংযোগ সুবিধার পণ্যগুলোর মাধ্যমে নতুন ধরনের চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইলিং শুরু হতে পারে। অর্থ না দেওয়া পর্যন্ত স্মার্টগাড়ি বা বাড়ির ভেতরে আটকে ফেলতে পারে দুর্বৃত্তরা। নতুন সিস্টেমগুলোতে যতই মুখভঙ্গি বা কণ্ঠস্বর শনাক্তকরণ (ফেসিয়াল বা স্পিস রিকগনিশন) প্রযুক্তি থাক না কেন, হালনাগাদ নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে এগুলোকেও ধোঁকা দেওয়া যায়।
ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) হয়ে দাঁড়াবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি বাজার। গ্রাহক, ব্যবসা ও সরকারি ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অব থিংসের ব্যবহার বেড়ে গেছে আর আগামী কয়েক দশকের মধ্যে হাজার কোটি যন্ত্রে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা থাকবে। ইউরোপোলের হুমকি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন ধরনের আক্রমণ আসছে আর দুর্বৃত্তরা তাদের শিকারের পথ খুঁজে নিতে শুরু করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ৩০০টির বেশি চিকিৎসা যন্ত্রপাতিতে ভাইরাস যেতে পারে এ ধরনের প্রতিবেদন পেয়ে হাসপাতালগুলোকে নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত করতে বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টুডি নামের প্রযুক্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট রড রাসমুসেন জানিয়েছেন, অনেক অজানা আন্ডারগ্রাউন্ড বাজার রয়েছে যেখানে আবিষ্কৃত সফটওয়্যার ও নিরাপত্তাবলয় পার করার প্রোগ্রাম কেনা-বেচা হয়।
তাঁর ধারণা, এখন পর্যন্ত ‘অনলাইন খুন’ ঘটেনি। কিন্তু এ বিষয়টি এখন বাস্তব হয়ে উঠেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের করা ভবিষ্যদ্বাণী এ বছর যদি নাও ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা ফলবে বলেই মনে করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা সংস্থা অনলাইন ট্রাস্ট অ্যালায়েন্সের কর্মকর্তা ক্রেইগ স্পিজেল বলেন, ‘কেউ আপনার স্মার্ট হোমের নিরাপত্তা ডিঙিয়ে আপনার ক্ষতি করে বসতে পারে। নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সব সময় আপনাকে ফাঁদে ফেলার জন্য পেছনে কেউ কলকাঠি নাড়ছে এটাই বাস্তবতা।’

No comments

Powered by Blogger.