সমস্যা হাজারো তবে সমাধানের পথও লাখো

কৈলাস সত্যার্থী। রয়টার্স
টেলিভিশনের দৌলতে ততক্ষণে খবরটি অনেকেরই জানা হয়ে গেছে। নয়াদিল্লির মধ্যবিত্ত এলাকা কালকাজির দোতলা ভবনটির সামনে তাই বড় জটলা। সারি সারি গাড়ি সেই ভবনের সামনে রাখা। সাধারণ বাড়িটা হঠাৎ করে বিখ্যাত হয়ে উঠল গত শুক্রবার। কেননা সেটাই বিশিষ্ট শিশু অধিকারকর্মী সদ্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী কৈলাস সত্যার্থীর কর্মস্থল। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানিয়েছেন কৈলাস—পাঁচ বছর বয়সে যেদিন প্রথম স্কুলে গিয়েছিলেন, সেদিন থেকেই শিশু অধিকারের বিষয়টি মনে গেঁথে যায় তাঁর। শিশু বয়সেই মনে ছাপ ফেলে মানুষে মানুষে বৈষম্যের বিষয়টি। স্কুলের পাশেই এক মুচির শিশুসন্তানকে বাবার সঙ্গে কাজ করতে দেখে শিশু কৈলাসের মনে প্রশ্ন জেগেছিল। স্কুলের শিক্ষকদের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তাঁরা বলেছিলেন, ওরা গরিব, তাই পড়তে পারে না। ওই জবাব শিশু কৈলাসের পছন্দ হয়নি।
একদিন সেই ছেলেটির বাবার কাছেই চলে গেলেন তিনি। জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা সবাই যখন স্কুলে যাই, ও কেন যায় না?’ ছেলেটির বাবার জবাব ছিল, ‘কাজ করতেই জন্ম হয়েছে আমাদের।’ কৈলাস বলেন, ‘আমি সেদিন বুঝতে পারিনি, কেন কিছু মানুষ শুধু কাজের জন্যই জন্মাবে আর অন্যরা জীবনকে নানাভাবে উপভোগ করবে।’ শৈশবের ওই ঘটনা কৈলাসের মনে গভীর রেখাপাত করে। ছাত্র থাকতেই তিনি শিশুশ্রমবিরোধী কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। তবে কীভাবে কী করবেন, তা জানা ছিল না। তিনি বলেন, ‘শিশুশ্রমের মতো এই ব্যাধি রোধে গত শতকের আশির দশক পর্যন্ত কোনো আইনই ছিল না। একপর্যায়ে ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হয়।’ শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য একপর্যায়ে প্রকৌশলী কৈলাস চাকরিই ছেড়ে দিলেন। গড়ে তুললেন ‘বাচপান বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি এনজিও। এখন বিশ্বের ১৪০টি দেশে কাজ করছে সংগঠনটি। বিশ্বব্যাপী নানাভাবে দুর্গত, বিপন্ন শিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করে সংগঠনটি। ১৯৮১ সালে ভারতের পাঞ্জাবের সেরহিন্দ এলাকায় প্রথম একটি মেয়েকে উদ্ধারের মাধ্যমে কাজ শুরু করে ‘বাচপান বাঁচাও আন্দোলন’।
সেই ঘটনা স্মরণ করে কৈলাস বলেন, ‘মেয়েটির বাবা আমাদের কাছে এসেছিলেন। আমরা সংঘর্ষ জারি রহেগা নামের একটি সাময়িকী বের করতাম। তিনি পত্রিকায় মেয়েটির দুরবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করার অনুরোধ করেছিলেন। তবে আমার মনে হয়েছিল, প্রতিবেদন যথেষ্ট নয়। মনে হয়েছিল, আমাকে কিছু একটা করতে হবে। কেননা, ১৩-১৪ বছরের মেয়েটিকে হয়তো শেষ পর্যন্ত যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হবে।’ এভাবেই শুরু। তারপর অসংখ্য শিশুর নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছেন কৈলাস সত্যার্থী। এ কাজেই তাঁর প্রশান্তি। বললেন, ‘যখন কোনো শিশুকে সহায়তা করি আর তার চোখের দিকে তাকাই, মনে হয় ওরাই আমাকে মুক্তি দিচ্ছে।’ নিজের এই কাজ চালিয়ে যাবেন কৈলাস সত্যার্থী, পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর সেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। আশাজাগানিয়া বাণীও শোনালেন, ‘ভারতের হাজারো সমস্যা আছে। তবে এসবের সমাধানের লাখো পথও রয়েছে।’ সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

No comments

Powered by Blogger.