রপ্তানি কমছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত চলতি বছরের প্রথম আট মাসের পরিসংখ্যানে এ চিত্র উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরী পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয় ৩৪৩ কোটি ৩৭ লাখ ৮১ হাজার ডলার। গত বছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ৩৪৮ কোটি ৬৫ লাখ ৯ হাজার ডলার। সে হিসাবে আয় কমেছে ১.৫১ শতাংশ। অঙ্কের হিসেবে এটি নগণ্য হলেও নিম্নমুখী প্রবণতাটি কিছুটা উদ্বেগজনক বলে মনে বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে একই সময়ে দেশটিতে ভিয়েতনাম ও ভারতের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসের মধ্যে শুধু জানুয়ারি ও জুলাই মাসে ৫০ কোটি ডলারের বেশি করে রপ্তানি হয়েছে। বাকি মাসগুলোয় বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫০ কোটি ডলারের কম। বাংলাদেশের জন্য বিশেষ বাজার সুবিধা (জিএসপি) গত বছর ১লা জুলাই থেকে স্থগিত ঘোষিত হয়, যা গত বছর ১লা সেপ্টেস্বর থেকে কার্যকর হয়। সে হিসেবে এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা না থাকার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এর জের ধরেই এই রপ্তানি কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্যে আরও দেখা যায়, সার্বিকভাবে ২০১২ সালে জিএসপিভুক্ত পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছিল ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। আর ২০১৩ সালে তা নেমে এসেছে ২ কোটি ১৫ লাখ ডলারে। অর্থাৎ রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। আর চলতি বছর কোন পণ্যই জিএসপির আওতায় রপ্তানি হয়নি। বাংলাদেশের যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছিল, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: প্লাস্টিক, সিরামিক, গলফ খেলার উপকরণ, কার্পেট, চশমা, পতাকা, চুরুট ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে অন্য দেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি থেকে ভিয়েতনামের আয় হয়েছে ৬০৮ কোটি ২৯ লাখ ৪৪ হাজার ডলার, যা ২০১৩ সালের একই সময়ে ছিল ৫৩০ কোটি ৭৩ লাখ ৫৯ হাজার ডলার। এ হিসাবে আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৬১ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি করে ভারতের আয় হয়েছে ২৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ডলার, যা ২০১৩ সালের একই সময়ে ছিল ২২৭ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ডলার। এক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৩৫ শতাংশ।
তথ্যে আরও দেখা যায়, মেক্সিকো, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি করে আয়ে প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছে যথাক্রমে দশমিক ২৯, ১.৬২ ও ৩.৭১ শতাংশ। এ আট মাসে দেশগুলোর আয় হয়েছে যথাক্রমে ২৪৭ কোটি ৭০ লাখ ৬২ হাজার, ১৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ও ১২৫ কোটি ৮৪ লাখ ৬১ হাজার ডলার। ২০১৩ সালের একই সময়ে দেশগুলোর আয় ছিল ২৪৬ কোটি ৯৮ লাখ ৯৬ হাজার, ১৬৪ কোটি ৫০ লাখ ২০ হাজার ও ১২১ কোটি ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার ডলার।
এছাড়া ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের প্রগেসিভ ইকোনমি নামে একটি প্রকল্পের আওতায় প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত হয় ট্রেড ফ্যাক্ট অব দ্য উইক। প্রগেসিভ ইকোনমির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, জিএসপি উঠে গিয়ে চীন সুবিধা পেয়েছে ও উন্নয়নশীল দেশগুলো পিছিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এ পিছিয়ে পড়ার তালিকায়। যেমন জিএসপি সুবিধা পেয়ে বাজার বাড়াচ্ছিল প্লাস্টিক ও সিরামিক পণ্য। এ সুবিধা স্থগিত হওয়ায় এ খাত দু’টি বেকায়দায় পড়েছে। রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন যে যুক্তরাষ্টে তাদের পণ্য রপ্তানি ব্যয় ২০ শতাংশের মতো বেড়ে গেছে। আর এই ব্যয় পুষিয়ে নেয়াটা সহজসাধ্য নয়। যেমন, ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি কমেছে প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ। আবার একই সময়ে সিরামিক রপ্তানি কমেছে ৩৩ শতাংশ। গলফ খেলার সামগ্রী বাংলাদেশ রপ্তানি করতো জিএসপির আওতায়। ২০১৩ সালের প্রথম ৭ মাসে ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার ডলারের গলফ সামগ্রী রপ্তানি হলেও চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে তা ৩৪ শতাংশ কমে হয়েছে ২৪ লাখ ৪৬ হাজার ডলার। বিজিএমইএ সহসভাপতি এসএ ম মান্নান কচি বলেন, রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছে। আর সে দেশে রপ্তানি আয় কম হওয়ার পেছনে এটাই বড় কারণ।

No comments

Powered by Blogger.