সমকামিতার শিকার জুবায়ের

আবু ওবায়েদ কাদের। একজন সমকামী। ৪৬ বছর বয়সী আলজেরিয়ান নাগরিক অবিবাহিত। প্রায় ১০ বছর ধরে অবৈধভাবে রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করছেন। বলাৎকার করতে গিয়েই তিনি হত্যা করেছেন ইংলিশ মিডিয়ামের ‘ও’ লেভেলের ছাত্র মুহাম্মদ জুবায়ের আহমদকে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জুবায়েরের খেলার সঙ্গী, ইংলিশ মিডিয়ামের নবম শ্রেণীর ছাত্র ইসমাইল হোসেন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে।

জুবায়ের হত্যা মামলায় আবু ওবায়েদ কাদের ও ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উদঘাটন হয়েছে হত্যা রহস্য। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃত ইসমাইলের বরাত দিয়ে ডিবি’র উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, গত ৪ঠা অক্টোবর বিকালে উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের পার্ক সমিতির মাঠে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে আবু ওবায়েদ কাদেরের উপস্থিতিতে জুবায়ের ও ইসমাইলসহ কিশোররা খেলায় অংশ নেয়। খেলা শেষে অন্যরা চলে গেলেও জুবায়ের তার গায়ের জার্সি খুলে পুকুরের পানিতে নামে। সঙ্গে সঙ্গে কাদেরও পানিতে নামেন। পানিতে নেমে জুবায়েরকে ধরে বলাৎকারের চেষ্টা করেন কাদের। এসময় জুবায়ের ও কাদেরের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে জুবায়েরের মৃত্যু ঘটে। বিষয়টি পুকুর পাড়ে থেকে প্রত্যক্ষ করে ইসমাইল হোসেন। এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ইসমাইল যেন কাউকে কিছু না জানায়, এজন্য তাকে টাকা-পয়সা ও বিদেশে নেয়ার প্রলোভন দেখায় কাদের।
উত্তরার পাঁচ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা জুবায়ের সহ অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন আবু ওবায়েদ কাদের। নানাভাবে উত্তরার কিশোরদের মধ্যে তিনি বিস্তার করেছিলেন সমকামিতার জাল। কৌশল হিসেবে কিশোরদের ফুটবল কোচের ভূমিকা পালন করতেন। গত প্রায় সাত বছর ধরেই উত্তরার চার, পাঁচ ও ছয় নম্বর সেক্টরের কিশোরদের কাছে ফুটবলের কোচ হিসেবে পরিচিত  আবু ওবায়েদ কাদের। প্রায়ই প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করতেন। খেলা শেষে তাদের মধ্যে অনেককে তিনি প্রায়ই ফাস্টফুডের দোকানে নিয়ে খাওয়াতেন। উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের চিলি থাই অ্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এবং ভূত রেস্টুরেন্টে একাধিকবার কয়েকজন কিশোরসহ আবু ওবায়েদকে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সময়ে-অসময়ে তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। এভাবেই ফুটবলপ্রেমী কিশোরদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরদের মধ্যে শাওন, মামুন, ইসমাইল প্রায়ই আবু ওবায়েদ কাদেরের ছয় নম্বর সেক্টরের ভাড়া বাসায়  যাওয়া-আসা করতো। জুবায়েরও তার বাসায় একাধিকবার গিয়েছে। এ কিশোরদের সঙ্গে ফেসবুকে দীর্ঘ সময় চ্যাট করতেন আবু ওবায়েদ কাদের। যৌন সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই তিনি কিশোরদের সঙ্গে চ্যাট করতেন। এমনকি তার মোবাইলফোনে সেন্ট করা ক্ষুদে বার্তাতেও তিনি যৌনবিষয়ক বাক্য ব্যবহার করতেন। এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রয়েছে।
কিশোরদের মধ্যে অনেকেই স্বীকার করেছে যে, আবু ওবায়েদ প্রায়ই তাদের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করতেন। কোন কোন কিশোরের সঙ্গে তার সমকামিতার সম্পর্ক ছিল বলেও জানা গেছে। সূত্রে জানা গেছে, বাসায় কাদের একা থাকেন। ওই নিরিবিলি বাসায় টার্গেটকৃত কিশোরকে নানা কৌশলে নিয়ে যেতেন তিনি। এক পর্যায়ে পর্নোভিডিও দেখার প্রস্তাব দিতেন। উত্তরার ছয় নম্বর সেক্টরের জুবায়েরের বন্ধু ইংলিশ মিডিয়ামের এক ছাত্র জানায়, কাদেরের বাসায় সে একবার যাওয়ার পর এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল। কৌশলে সে বাসা থেকে ওই দিন বের হয়ে যায়। কিন্তু লজ্জায় তা কারও কাছে প্রকাশ করেনি সে।
সর্বশেষ আবু ওবায়েদ কাদেরের সমকামিতার টার্গেট হয়ে জীবন দিতে হলো মেধাবী ছাত্র জুবায়েরকে। গত ৪ঠা অক্টোবর বিকালে ফুটবল খেলতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেনি সে। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখুঁজি করেন। বাসায় রেখে যাওয়া জুবায়েরের মোবাইলফোন থেকে পরিচিত ব্যক্তিদের  কল করেন তারা। তখন জুবায়েরের বন্ধু ইসমাইলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে আবু ওবায়েদ কাদের কল রিসিভ করেন নি। পরদিন এ বিষয়ে কাদের জানান, জুবায়ের পুকুরে ডুবে মারা গেছে। ওই পুকুর থেকে জুবায়েরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। তবে কাদেরের অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ হয় জুবায়েরের পরিবারের সদস্যদের। ওই দিনই আবু ওবায়েদ কাদের ও ইসমাইলকে আসামি করে উত্তরা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন জুবায়েরের মা দিলারা বেগম। মামলাটি ছায়া তদন্ত করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত ১০ই অক্টোবর বিকাল ৪টার দিকে ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে পুলিশ হেফাজতে নিলে উদঘাটিত হয় জুবায়ের হত্যা রহস্য।

No comments

Powered by Blogger.