মৃ​তের সংখ্যা চার হাজার ছাড়াল

আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। প্রাণঘাতী এ জীবাণুতে সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যা শুক্রবার চার হাজার ৩৩-এ উঠেছে। প্রায় সব কটি মৃত্যুর ঘটনা আফ্রিকায় ঘটলেও কয়েকটি মহাদেশে বেশ কয়েকটি সংক্রমণের ঘটনার কারণে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ইবোলা সংক্রমণ রোধে এখনকার চেয়ে অন্তত কুড়ি গুণ বেশি ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ। খবর রয়টার্স, আল-জাজিরা ও বিবিসির। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, সাতটি দেশে ইবোলায় এযাবৎ নিবন্ধিত আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ৩৯৯। ডব্লিউএইচও ইবোলা আক্রান্ত সাতটি দেশকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। এর মধ্যে প্রথম ভাগে আছে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পশ্চিম আফ্রিকার তিন দেশ গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওন। দ্বিতীয় ভাগে আছে আফ্রিকারই নাইজেরিয়া, সেনেগাল, ইউরোপের স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের ইবোলাবিষয়ক বিশেষ দূত ডেভিড নাবারো শুক্রবার বলেন, প্রতি তিন থেকে চার সপ্তাহে ইবোলায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। এ মাস থেকে এর সংক্রমণ রোধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, প্রকৃত অর্থে এর চেয়ে কুড়ি গুণ ব্যবস্থা নিতে হবে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লাইবেরিয়ায় সবচেয়ে বেশি (চার হাজার ৭৬ জন) ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছে। এখানে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৩১৬। দুই হাজার ৯৫০ জন আক্রান্ত হয়েছে সিয়েরা লিওনে। এখানে মৃতের সংখ্যা ৯৩০। গত বছরের ডিসেম্বরে যে দেশটিতে এই মহামারি শুরু হয়েছিল, সেই গিনিতে এযাবৎ মারা গেছে ৭৭৮, আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৩৫০। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ইবোলায় আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। ইতিমধ্যে আক্রান্ত ৪১৬ স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ২৩৩ জনই মারা গেছেন। ইবোলার সংক্রমণ রোধে বিশ্বব্যাপী নেওয়া হচ্ছে নানা ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র গতকাল শনিবার প্রথমবারের মতো কয়েকটি বিমানবন্দরে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নিউইয়র্কের ব্যস্ত জন এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমানবন্দরে গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওন থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। গত বুধবার টেক্সাসে ইবোলায় আক্রান্ত এক মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর পর এ ব্যবস্থা নেওয়া হলো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কানাডার সরকার গত শুক্রবার সে দেশের নাগরিকদের ইবোলা আক্রান্ত পশ্চিম আফ্রিকা ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে। কানাডার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন,
ইবোলা উপদ্রুত দেশ থেকে যারা কানাডায় আসবে তাদের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় সিয়েরা লিওন থেকে ফেরা একজন নার্সকে ইবোলা আক্রান্ত সন্দেহে আলাদা রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সে দেশে এ পর্যন্ত ১১ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কাউকে আক্রান্ত বলে পাওয়া যায়নি। আফ্রিকার অর্থনীতি ঝুঁকিতে: ইবোলার এবারের নজিরবিহীন সংক্রমণ আক্রান্ত আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনীতির ওপর হুমকি সৃষ্টি করেছে। লাইবেরিয়া কয়েক মাসে ইবোলা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঞ্চয় থেকে চার কোটি ডলার ব্যয় করেছে বলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর বইমা কামরা জানিয়েছেন। লাইবেরিয়া এ সংকট কাটাতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের শরণাপন্ন হয়েছে। গত সপ্তাহে দেশটির অর্থমন্ত্রী আমারা কোনে বলেছেন, তাঁদের রাজস্ব আয় ২০ শতাংশ কমে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইবোলা আক্রান্ত গিনিকে আরও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত শুক্রবার গিনির প্রেসিডেন্ট আলফা কোন্ডে আইএমএফের পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আগামী বছরের মধ্যে ইবোলার বিস্তার রোধ করতে না পারলে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনীতির তিন হাজার ২০০ কোটি ডলার ক্ষতি হবে।

No comments

Powered by Blogger.